প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২২
মাগুরায় মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হয়ে জন্ম নেওয়া সেই সুরাইয়াকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে সুরাইয়ার বাবা বাচ্চু ভুইয়া মেয়েকে সিআরপি হাসপাতালে ভর্তির খবরটি নিশ্চিত করেছেন।
সুরাইয়া নতুন বছরে স্কুলে যাওয়া শুরু করলেও অসুস্থতা ও গুলির আঘাতে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে পড়ালেখা বন্ধের উপক্রম হয় বলে পরিবার জানায়।
মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণে জন্মের পর থেকেই সুরাইয়ার কোমর থেকে দুই পায়ের নিচের অংশ অনেকটাই চলৎশক্তিহীন। সে হাঁটতে পারে না। ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন সুরাইয়ার ভাল চিকিৎসা না করালে বাম চোখটিও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।তিনি বলেন, মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ হয়ে জন্ম নেওয়া তার কন্যশিশু সুরাইয়া ধীরে ধীরে প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে। নানা শরীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে এরই মধ্যে তার বয়স ছয় বছর পেরিয়েছে।”বাবা বাচ্চু ভুইয়ার ছোট একটি চায়ের দোকান ছিলো, এখন সেটাও বন্ধ। সংসারে অভাব অনটন নিত্য দিনের সঙ্গী।
মা নাজমা বেগম বলেন, পরিবারের ছয় সদস্যের সংসার চালাতে নাভিশ্বাস উঠছে তার স্বামীর। তারপর সুরাইয়াকে নিয়ে পড়েছেন অকুল পাথারে। মাগুরা পুলিশ লাইন্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিও হয়েছে। শিশু সুরাইয়াকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত করে গড়ে তুলবেন।তার সমবয়সীরা বাচ্চারা এখন দৌঁড়ে বেড়ালেও সুরাইয়া এখন দাঁড়াতেও পারেনা। কেউ দুহাতে ধরে দাঁড় করিয়ে দিলেও ছেড়ে দিলেই সে পড়ে যায়। সুরাইয়ার ডান পাশটিতে জোর কমে যাচ্ছে। ডান হাতে সে কাজ করতে পারেনা। তবে চিকিৎসকেরা বলেছেন তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারলে ভালো হয়ে যাবে কিন্তু আমাদের সেই অর্থনৈতিক ক্ষমতা নেই যে তাকে উন্নত চিকিৎসা দেব।
মাগুরা পুলিশ লাইন্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফেরদৌসি জয়া বলেন, “স্কুলে অন্য শিক্ষার্থীদের মত সুরাইয়ার প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ রয়েছে। তাছাড়া পরিবার তার সুচিকিৎসার জন্য উদগ্রীব।
“শিশুটির চিকিৎসার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লেখালেখি করলে বিষয়টি মাগুরার অ্যাডভোকেট ওহিদুর রহমান টিপুর নজরে আসে। তিনি সিআরপিতে কর্মরত কাজী বিল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। সোমবার বিল্লাল হোসেনের মাধ্যমে সুরাইয়াকে সেখানে ভর্তি করা হয়।”
মাগুরার জেলা প্রশাসক আশরাফুল আলম বলেন, সুরাইয়ার পরিবার চাইলে শিশুটির চিকিৎসা, লেখাপড়াসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে জেলা প্রশাসন।
২০১৫ সালের ২৩ জুলাই মাগুরা শহরের দোয়ারপাড়ে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সমর্থক দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে মমিন ভূইয়া নামে একজন নিহত হন। এছাড়া সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন এক পক্ষের নেতা কামরুল ভূইয়ার ভাবি অন্তঃসত্ত্বা নাজমা বেগম। পরদিন গুলির ক্ষত নিয়েই জন্ম হয় সুরাইয়ার।
এ ঘটনায় ২৫ জুলাই মোমিন ভুইয়ার ছেলে রুবেল ছাত্রলীগ নেতা সুমন সেনকে প্রধান আসামি করে সদর থানায় ১৬ জনের নামে মামলা করেন। মামলার আসামিদের মধ্যে আজিবর নামে একজন এরই মধ্যে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।
তদন্ত শেষে এজাহারভুক্ত এক আসামির নাম বাদ ও নতুন তিন জনের নাম যোগ করে পরবর্তীতে ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
২০১৭ সালের মার্চে মামলা থেকে অব্যাহতি চাওয়া পাঁচ আসামির আবেদন খারিজ করে অভিযোগভুক্ত ১৭ আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন বিচারক।
মামলার অভিযুক্তরা হলেন- সুমন সেন, আলী আকবর, মুজিবুর রহমান, সুমন আলী, ফরিদুর রহমান, সাগর, বাপ্পী গাজী, ইলিয়াস মোল্যা, সোহেল মিয়া, লিটন মল্লিক, মিল্টন মল্লিক, নজরুল ইসলাম, সোবহান শেখ, সোলায়মান হোসেন, তৈয়বুর রহমান তোতা, মো. সুমন ও আয়নাল শেখ।