৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার,ভোর ৫:১৬

নিরাপত্তা হুমকিতে বেনাপোল স্থলবন্দর প্রতিটি শেডে  বহিরাগত একজন করে লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০২০

  • শেয়ার করুন

মিলন হোসেন বেনাপোল,
নিরাপত্তা হুমকিতে রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল। বন্দরে বহিরাগত আনঅথোরাইজড লোকজনের অবাধ যাতায়াত হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে।
বর্তমানে বন্দরের প্রতিটি শেডে ‘টেন্ডল’ নামে বহিরাগত একজন করে লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে অবৈধভাবে। যারা সরাসরি রাজস্ব ফাঁকি ও শেড থেকে মালামাল চুরির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলো। বন্দরে মোট ৪২টি শেড রয়েছে, যার প্রতিটি শেডে বহিরাগত ‘টেন্ডল’ নিয়োগ দেয়া হয়েছে রাজস্ব ফাঁকি ও মালামাল চুরি রোধের জন্য।

বেনাপোল বন্দর দিয়ে বছরে ২০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। যা থেকে সরকার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করে থাকে। বন্দর কর্তৃপক্ষও আলাদা রাজস্ব পায়। অথচ আমদানিকৃত এসব পণ্যের নিরাপত্তা নেই বললেই চলে। প্রতিনিয়ত পণ্য চুরি হচ্ছে বন্দর থেকে। ঘটছে অগ্নিকাণ্ড।
বেনাপোল কাস্টম হাউজ সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছর ভারত থেকে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৩ মেট্রিক টন পণ্য এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছিল ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯৭ দশমিক ৯৩ মেট্রিক টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ২১ লাখ ৮১ হাজার ১২৩ মেট্রিক টন পণ্য।
চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৫০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১ হাজার ৫০৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৯৯৯ কোটি ৯ লাখ টাকা।
বন্দরের প্রতিটি গেটে নিরাপত্তা কর্মীরা দায়িত্বে থাকার পরও অবাধে প্রবেশ করছে বহিরাগত লোকজন। বন্দর একটি বন্ডেড কেপিআইভুক্ত এলাকা সত্ত্বেও কীভাবে বন্দরে অবৈধ লোকজন প্রবেশ করছে তা নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে অভিযোগ করা হলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করছে না।

গত ১৭ ডিসেম্বর বেনাপোল কাস্টমস হাউজে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের এক পরামর্শক কমিটির সভায় বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলো বন্দরে অবৈধ লোকজনের অবাধ যাতায়াত করার বিষয়ে অভিযোগ করে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ আজও পর্যন্ত এসব অবৈধ লোকজনকে শেড থেকে সরাতে পারেনি। ফলে আমদানিকারক ও বন্দর ব্যবহারকারীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে তারা যে কোনো সময় বড় ধরনের আন্দোলনে যাওয়ার কথা ভাবছে।
বেনাপোল আমদানি রফতানিকারকরা জানান, বন্দরে বহিরাগত লোকজনরাই মালামাল চুরি করছে। বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন তরফদারের ছত্রছায়ায় বন্দর থেকে মালামাল চুরি হচ্ছে।
একজন ব্যাবসায়ী বলেন, আমার ৫টি চালানের মালামাল চুরি হয়েছে বন্দরের শেড থেকে। তার মধ্যে গতমাসে একটি সিমেন্ট কোম্পানির আমদানি করা মেশিনের একটি মোটর খুলে নিয়ে গেছে চোরেরা। যার মূল্য ১২ লাখ টাকা। বন্দর কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেও কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন বলেন ,বন্দরের ভেতর অবৈধ লোকজন শেডে থাকা ঠিক না আমরা বিভিন্ন সময়ে বন্দর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেছি কিন্তু বন্দরের অসহযোগিতার কারণে বহিরাগত লোকজনের যাতায়াত ঠেকানো যাচ্ছে না। বরং তাদের প্রশ্রয়ে বন্দরে বিভিন্ন শেডে এসব অবৈধ লোকজন রাখা হয়েছে যার কারণে বন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে।

ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান জানান, বেনাপোল বন্দর হল অর্থনীতির অন্যতম প্রধান মাধ্যম। ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের সিংহভাগ সম্পন্ন হয় এ বন্দরের মাধ্যমে। বন্দরের বহিরাগত অবৈধ লোকজনের অবাধ যাতায়াত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কিত।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল বন্দরের পরিচালক আবদুল জলিল জানান, বন্দরে অবাধে বহিরাগত লোকজনের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। বন্দরের শেডের অভ্যন্তরে কোনো অবস্থাতেই বহিরাগত ‘টেন্ডল’ রাখা যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব এসব নিয়ন্ত্রণ করা হবে। মালামাল চুরির বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন