প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২১
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড থেকে চেক জালিয়াতি করে আরও ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) বিষয়টি ধরা পড়লে গোপনে দুদকে আরও একটি অভিযোগ দেয় শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। বোর্ডের হিসাব ও অডিট শাখার উপ-পরিচালক জানিয়েছে এ অনিয়মের সাথে বোর্ডের হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম ও ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম বাবু জড়িত।
তাদের বিরুদ্ধে এর আগে গত ৭ অক্টোবর আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। যে ঘটনায় ইতোমধ্যে দুদক বোর্ডের চেয়ারম্যান, সচিব, হিসাব সহকারী আব্দুস সালামসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
সবমিলে মোট ২৬টি চেকে ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭৪২ টাকার বিপরীতে ৫ কোটি ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৮৯৮ টাকা লোপাট করার প্রমাণ পেয়েছে অডিট শাখা।
সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে সরকারি কোষাগারে জমার জন্য আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ১০ হাজার ৩৬ টাকার ৯টি চেক ইস্যু করা হলেও চেক ৯টি দিয়ে ২ কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা উত্তোলন করে ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং এবং শাহী লাল স্টোর নামে দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।
গত ৭ অক্টোবর এ ঘটনা প্রকাশ পাবার পর বোর্ডের হিসাব ও অডিট বিভাগ তাদের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা অব্যাহত রাখেন। যার ফলশ্রুতিতে গত ১৮ অক্টোবর ৫টি চেকে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৭৬৪ টাকার স্থলে ২১ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৯ টাকা উত্তোলনের তথ্য মেলে।
এরপর গত ২১ অক্টোবর ১১টি চেকের বিপরীতে ১০ লাখ ১৫ হাজার ২৬৬ টাকার স্থলে ২ কোটি ২১ লাখ ৮ হাজার ৯৪৯ টাকা উত্তোলনের তথ্য পাওয়া যায়। এরপর বিষয়টি হিসাব শাখা থেকে বোর্ডের সচিবকে পত্র দিয়ে অবহিত করা হয়। ওইদিনই বোর্ডের সচিব দুদক যশোরে নতুন করে ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট বিজনেস আইটি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে আয়কর বাবাদ ১২ হাজার ২৭৬ টাকা তুলে নেওয়া হয়। একই সালের ৪ অক্টোবর শহরের জামে মসজিদ লেনের নূর এন্টারপ্রাইজ নামে ৫৯ হাজার ৩৫ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল মেসার্স খাজা প্রিন্টিং প্রেসের নামে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩০ টাকা ও নিহার প্রিন্টিং প্রেসের নামে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩০ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এভাবে ৯টি প্রতিষ্ঠানের নামে আরও ২ কোটি ৪৩ লাখ ৭ হাজার ৮৭৮ টাকা তুলে নিয়েছে হিসাব সহকারী আবদুস সালাম। এরমধ্যে সেকশন অফিসার আবুল কালাম আজাদের নামে ৯৪ হাজার ৩১৬ টাকা ও আবদুস সালামের নিজ নামেও ২৫ লাখ ৮০ হাজার ১০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের হিসাব ও নিরীক্ষা বিভাগের উপপরিচালক এমদাদুল হক জানান, আমরা আরও প্রায় আড়াই কোটি টাকার চেক জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছি। যা দুদকে ২১ অক্টোবর আরও একটি অভিযোগ জমা দিয়েছি। ওই সময় বর্তমানে চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন বোর্ডের সচিব ছিলেন। হিসাব সহকারী আবদুস সালাম তখনও হিসাব শাখার দায়িত্বে ছিলেন।
এসব অনিয়মের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আব্দুস সালামের অন্যতম সহযোগী বোর্ডের ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম বাবু। তিনি বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে দীর্ঘদিন বোর্ডে কাজ করছেন এবং সেসব প্রতিষ্ঠানের নামেই চেকগুলো দিয়ে অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এখন দুদক বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলেও জানান এমদাদুল হক।
দুর্নীতি দমন কমিশন যশোর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো: নাজমুচ্ছায়াদাত জানান, আমাদের কাছে আরও প্রায় আড়াই কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগ করা হয়েছে। কারা করেছে তা খুঁজে বের করা হবে। এর আগে ১৮ অক্টোবর আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫ জনকে আসামি করে মামলা করে দুদক। দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক মাহফুজ ইকবাল বাদী হয়ে এই মামলা করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন, যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোল্লা আমীর হোসেন, সচিব অধ্যাপক এএম এইচ আলী আর রেজা, হিসাব সহকারী আবদুস সালাম, প্রতারক প্রতিষ্ঠান ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক রাজারহাট এলাকার বাসিন্দা আবদুল মজিদ আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম বাবু ও শেখহাটী জামরুলতলা এলাকার শাহীলাল স্টোরের মালিক মৃত সিদ্দিক আলী বিশ্বাসের ছেলে আশরাফুল আলম।
মামলা হওয়ার পর ওইদিন রাতেই চেয়ারম্যান ও সচিব তাদের বাংলো থেকে বের হয়ে যান। এরপর তারা কেউ অফিসে আসেনি।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাধব চন্দ্র রুদ্র আরও আড়াই কোটি টাকা জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।