৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার,সকাল ৯:২৫

ব্রাজিলকে কাঁদিয়ে মেসির আর্জেন্টিনার স্বপ্নপূরণ

প্রকাশিত: জুলাই ১১, ২০২১

  • শেয়ার করুন

অপেক্ষা যতই দীর্ঘ হোক না কেন। তার একটা শেষ আছে। শেষ হলো ২৮ বছরের প্রতীক্ষার প্রহর। স্বপ্নপূরণ হলো দেড় দশকের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসির। প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনার হয়ে সাফল্যের দেখা পেলেন ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার। আজ সকালে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে স্বপ্নের কোপা আমেরিকার ১৫তম ট্রফি জিতে নিল আর্জেন্টিনা।

ম্যাচের একমাত্র ও জয়সূচক জয়সূচক গোলটি করেছেন অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়া। সতীর্থ মেসির অনেক দুঃখের সঙ্গী তিনি। প্রথমার্ধের ২২ মিনিটে করা তার গোলটার আর শোধ দিতে পারেনি ব্রাজিল। তাতেই বাজিমাত। ১৯৯৩ সালের পর আবারো ল্যাটিন আমেরিকান ফুটবলের ঝান্ডাটা হাতে নিল আর্জেন্টিনা। তাতে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললেন মেসি। আর বিশ্বজুড়ে তার এবং আর্জেন্টাইন সমর্থকদের জন্য এলো বড় অনুঘটক।

কোপা আমেরিকার ফাইনালে আগের দুইবারের দেখায় প্রতিবারই জিতেছে ব্রাজিল। গত আসরেও সেমিফাইনালে মেসিদের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিয়ে সেলেকাওরা ওঠে ফাইনালে; জেতে কোপার রুপালি ট্রফি। আজকের জয়ে যেন মধুর একটা প্রতিশোধ নিল আর্জেন্টিনা। তাদের শিরোপা উৎসব কয়েকগুণ বেড়ে গেছে ব্রাজিলের মাটিতেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ায়।

মেসির ক্যারিয়ারে এটা আর্জেন্টিনার পঞ্চম ফাইনাল ছিল। আগের সবকটি টুর্নামেন্টেই তীরে এসে তরি ডুবেছে তাদের। তন্মধ্যে কোপা আমেরিকাতেই তিনবার শিরোপা হাতছোঁয়া দূরত্বে রেখে এসেছে আলবিসেলেস্তেরা। অবশেষে দূরত্ব ঘোচাল আকাশী-নীল জার্সিধারীরা। ‘সুপার ক্লাসিকো’য় সুপার পারফরম্যান্সে চার ফাইনাল হারের দুঃস্বপ্ন মাটি চাপা দিল আর্জেন্টিনা।

শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে ব্রাজিলের বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়াম ভারি হয়ে ওঠে নেইমারদের কান্নায়। জল ঝরেছে মেসির চোখেও। আগের চারটা ফাইনলেও অস্রুসিক্ত হয়েছেন তিনি। কিন্তু তার এবারের অস্রু আনন্দের; স্বপ্নপূরণের আনন্দের। এ জন্য মেসি ধন্যবাদ দিতে পারেন ডি মারিয়াকে। ম্যাচের শুরুতে গোলরক্ষক এডারসনের মাথার ওপর দিয়ে ব্রাজিলের জালে বল পাঠিয়ে দেন তিনি। আগের তিন ম্যাচে শুরুর একাদশে উপেক্ষিত ডি মারিয়া ফাইনালেই নিজেকে প্রমাণ করলেন। গড়ে দিলেন শিরোপা ভাগ্য।

ক্লাব ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য সবকিছুই জিতেছেন মেসি। কিন্তু আর্জেন্টিনার হয়ে অর্জন শূন্য। ‘ও আমাদের নয় কাতালানদের’- এমন অপবাধের বোঝাও কাঁধে নিয়ে চলতে হয়েছে তাকে। অথচ মেসি চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেননি কখনোই। অধিনায়ক হিসেবে সতীর্থদের ব্যর্থতার দায় গিয়ে শেষাবধি নিতে হয়েছে তাকে। আজ আর তাকে নিরাশ করেননি সতীর্থরা।

রক্ষণ, মধ্যমাঠ কিংবা ফরওয়ার্ড- কোথায় দুর্দান্ত খেলেনি আর্জেন্টিনা। তবে গোলবার অক্ষত রাখার সবচেয়ে বড় কৃতিত্বটা দিতে হবে অ্যামিলিয়ানো মার্টিনেজকে। নেইমার-পাকুয়েতা-ফিরমিনোদের মুহুর্মুহু আক্রমণ প্রতিরোধ গড়ে দিয়েছেন এই আর্জেন্টাইন শেষ প্রহরী। ব্রাজিল অবশ্য একটা গোল করেছিল দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে। কিন্তু সেটা বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের ফাঁদে পরে।

ম্যাচটা দুই দলের জন্য পেশীশক্তি প্রদর্শনের লড়াইও বলা চলে। দুই দলই নেতিবাচক ফুটবল উপহার দিয়েছে। ফাইনাল দেখেছে নয়টি হলুদ কার্ড। কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালের ইতিহাসে এতগুলো কার্ড খরচ করতে হয়নি কোনো রেফারিকে। কিন্তু লড়াইটা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার বলেই ফুটবলীয় যুদ্ধ ছাড়াও অন্য আরেকটা লড়াই চলে।

কখনো তা আবেগের বাধ ভাঙে। সেই আবেগের উচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে আর্জেন্টিনা। দেশের প্রায় তিন দশকের স্বপ্নপূরণের নেপথ্যে যিনি তিনি লিওনেল স্কালোনি। আর্জেন্টিনার দায়িত্ব নিয়েই অভিমানি মেসিকে অবসর থেকে ফেরান। তার আস্থার পূর্ণ প্রতিদান দিয়েছেন এই খুদে জাদুকর। এবারের কোপায় তো রীতিমতো অবিশ্বাস্য হয়ে উঠেছেন মেসি।

নিজে করেছেন চার গোল এবং সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন পাঁচ গোল। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের পুরস্কার হিসেসে তিনি পেয়েছেন গোল্ডেন বুট এবং বল দুটোই। যদিও গোল্ডেন বলে ভাগ আছে তার বন্ধু নেইমারের। কিন্তু এসব ব্যক্তিগত অর্জন নয়, মেসি বরাবরই চেয়েছেন দলীয় সাফল্য। স্বপ্নের সেই সাফল্য এসেছে। এ জন্য সেমিফাইনালে রক্ত ঝরিয়েছেন মেসি। আজকের ফাইনালে রক্ত ঝরল আরো এক আর্জেন্টাইনের পা থেকে।

আর্জেন্টিনা ট্রফিটা জিততে কতটা মরিয়া ছিল তা বোঝাতে এই দুটি তথ্যই যথেষ্ঠ। রক্তাক্ত হয়েও মাঠ ছাড়েননি তারা। ফুটবল বিধাতা এবার তাদের নিরাশ করেননি। পরিশ্রমের ফসল ঘরে তুলেছেন মেসিরা। রাহুর দশা ঘুচে গেছে। এবার আরো দূরে এগিয়ে যাওয়ার পালা। মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ফিরে যাওয়া আর্জেন্টিনা নিশ্চিতভাবেই এবার বিশ্বজয়ের পুরনো স্বপ্নটা নতুন করে দেখবে।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন