১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার,সকাল ৯:৪১

বিতর্কিত পেনাল্টিতে শেষ মুহূর্তে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২১

  • শেয়ার করুন

প্রথমার্ধে দারুণ এক গোল করে বাংলাদেশকে লিড এনে দিয়েছিলেন সুমন রেজা। সে লিড দলটি ধরে রেখেছিল ৮৮ মিনিট পর্যন্ত। কিন্তু এরপর বিতর্কিত এক পেনাল্টি গোলে ডেডলক ভাঙে বাংলাদেশের। এক পয়েন্ট ছিনিয়ে নেয় নেপাল। তাতেই নতুন ইতিহাস গড়ে দলটি। প্রথমবারের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের টিকেট পায় নেপাল।

মালদ্বীপের মালেতে বুধবার বিকেলে নেপালের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে বাংলাদেশ। সুমনের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর শেষ দিকে অঞ্জন বিস্তার গোলে ১৬ বছর পর আরও একটি ফাইনাল খেলার স্বপ্নভঙ্গ হয় অস্কার ব্রুজনের শিষ্যদের।

তবে ড্র হলেও এ ম্যাচে হারতেই পারতো বাংলাদেশ। মূলত গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর দৃঢ়তায় হার এড়াতে পেরেছে দলটি। যদিও ৭৯তম মিনিটে লাল কার্ড দেখেন জিকো। নিশ্চিত গোল উপরে উঠে হাত দিয়ে ঠেকিয়ে বাংলাদেশকে একটি লাইফলাইন দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেরে উঠল না তারা।

ম্যাচের প্রথমার্ধে পরিকল্পিত ফুটবল খেলতে পারলেও দ্বিতীয়ার্ধে তা করতে পারেনি বাংলাদেশ। তাতে ৮৮তম পর্যন্ত দুর্গ আগলে রাখতে পারলেও শেষ রক্ষা হয়নি। মাঝ মাঠের দখল ছিল নেপালের কাছেই। ৬৭ শতাংশ সময় বল দখলে ছিল তাদের। শট নেয় ১৮টি। যার ৩টি ছিল লক্ষ্যে। অন্যদিকে ১০টি শটের ৪টি লক্ষ্যে রাখে বাংলাদেশ।

এদিন দুই দলই তিনটি করে পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে। আগের ম্যাচগুলোতে দারুণ খেললেও মতিন মিয়াকে বসিয়ে এদিন সুমন রেজাকে মাঠে নামিয়েছিলেন বাংলাদেশ কোচ অস্কার ব্রুজন। তার টোটকা কাজেও লেগেছিল। সুমনের গোলেই এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ।

ম্যাচের প্রথম সুযোগেই এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। নবম মিনিটে জামাল ভুঁইয়ার ফ্রিকিক নেপালের এক খেলোয়াড়ের মাথায় লেগে গোলমুখে অনেকটা ফাঁকায় চলে আসে সুমন কাছে। লাফিয়ে উঠে দারুণ এক হেডে বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি উত্তর বারিধারার এ ফরোয়ার্ড।

চার মিনিট পর সুমনের কাছ থেকে বল পেয়ে জায়গা করে নিয়ে দূরপাল্লার শট নিয়েছিলেন সাদউদ্দিন। তবে লক্ষ্যে থাকেনি। ১৫তম মিনিটে বড় বাঁচা বেঁচে যায় বাংলাদেশ। একেবারে ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন রোহিত চাঁদ। বাংলাদেশের এক খেলোয়াড়কে কাঁটিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে অসাধারণ এক কাটব্যাক করেন আইয়ুস ঘালান। কিন্তু উড়িয়ে মেরে চাঁদ সে সুযোগ নষ্ট করেন।

২১তম মিনিটে ব্যবধান বাড়াতে পারতো বাংলাদেশ। দিনেশ রাজবানশির কাছ থেকে বল কেড়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন সুমন। তখন অনেকটা ফাঁকায় ছিলেন ইব্রাহীম। কিন্তু কাটব্যাক না করে নিজেই শট নিতে গিয়ে নষ্ট করেন সে সুযোগ। গোলরক্ষক বরাবর নেওয়া তার দুর্বল শট সহজেই ধরে ফেলেন কিরান চেমজং।

তিন মিনিট পর অঞ্জন বিস্তার ফ্রিকিক অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। প্রথমার্ধে যোগ করা সময়ে সমতায় ফিরতে পারতো নেপাল। নাবিল বিস্তার কাটব্যাক থেকে আইয়ুসের নেওয়া বুলেট হেড একেবারে বারপোস্ট ঘেঁষে বাইরে গেলে বেঁচে যায় জামাল ভুঁইয়ারা।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়াকে উঠিয়ে সোহেল রানাকে মাঠে নামান ব্রুজন। তবে তাতে লাভ হয়নি। মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ আরও চলে যায় নেপালিদের কাছে। এ অর্ধে মুহুর্মুহু আক্রমণ করে দলটি। ফরোয়ার্ডের ব্যর্থতা ও বাংলাদেশ গোলরক্ষক জিকোর দৃঢ়তায় গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় প্রায় শেষ পর্যন্ত।

দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম আট মিনিটেই কমপক্ষে দুটি গোল পেতে পারতো নেপাল। ৪৯তম মিনিটে আইয়ুসের হেড পাঞ্চ করে ঠেকান জিকো। ৫৩তম মিনিটের সেভটি তো অবিশ্বাস্য। আইয়ুসের আরও একটি দারুণ হেড শেষ মুহূর্তে একেবারে গোললাইন থেকে ঠেকান বাংলাদেশ গোলরক্ষক।

৫৫তম মিনিটে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারতেন সুমন। গোলরক্ষককে একা পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। সতীর্থের পাস থেকে এগিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে যে শট নেন তা গোলরক্ষক কিরানের পায়ে লেগে বেরিয়ে গেলে নষ্ট হয় সুবর্ণ সে সুযোগ। ৬৩তম মিনিটে সোহেল রানার ফ্রিকিক থেকে ইব্রাহিমের হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি।

পরের মিনিটে সুমনের শট ঠেকান নেপাল গোলরক্ষক। এর পরের মিনিটে আবারো অবিশ্বাস্য জিকো। অঞ্জন বিস্তার শট আবারো গোললাইন থেকে ঠেকান তিনি। ৭০তম আবারো বেঁচে যায় বাংলাদেশ। গৌতম শ্রেষ্ঠার ক্রস থেকে রোহিত চাঁদের হেড একেবারে বারপোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে গেলে হতাশা বাড়ে নেপালের।

৭৯তম মিনিটে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ১০ জনের দলে পরিণত হয় তারা। ভুলটা করে ফেলেন বিপলু আহমেদ। ঠিকভাবে ব্যাকপাস দিতে না পারায় ধরে ফেলতে পারতেন নবদুত। কিন্তু ফাঁকায় বল পেয়ে যাওয়ার আগে এগিয়ে এসে তা ঠেকাতে চাইলে হাতে লাগে জিকোর। ফলে রেফারি সরাসরি লাল কার্ড দেখান এ গোলরক্ষককে।

এরপর বিপলু আহমেদকে নামিয়ে আশরাফুল ইসলাম রানাকে মাঠে নামান বাংলাদেশ কোচ ব্রুজন। একই সঙ্গে গোলদাতা সুমনকে বসিয়ে আতিকুর রহমান ফাহাদকে মাঠে নামিয়ে রক্ষণভাগের শক্তি বাড়ান তিনি। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি।

৮২তম মিনিটে দারুণ এক সেভ করেন রানা। কিন্তু
ম্যাচের ৮৮তম মিনিটে নেপালকে বিতর্কিত এক পেনাল্টি উপহার দেন রেফারি।
সেই পেনাল্টি থেকে গোল করে ম্যাচে সমতা ফিরিয়ে আনেন নেপালের অঞ্জন বিস্তা। ম্যাচের বাকি সময় আর গোল করতে না পারায় হার নিয়েই মাঠ ছাড়ে ১০ জনের বাংলাদেশ। ফাইনালে যেতে হলে জিততেই হতো বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশের ১৬ বছর পর সাফ ফাইনাল খেলার স্বপ্নও শেষ হয়ে যায়। উজবেকিস্তানের রেফারির শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গে মালে স্টেডিয়াম পরিণত হলো বাংলাদেশের ট্র্যাজেডি হিসেবে। গ্যালারীতে থাকা বাংলাদেশের সমর্থকরাও নিথর দাঁড়িয়ে রইলেন। প্রেসবক্সে থাকা বাংলাদেশি সাংবাদিকরাও নিশ্চুপ।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন