২২শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার,সকাল ৭:৩৭

চাঁদপুরে সংঘর্ষে নিহত ৩, তদন্ত কমিটি গঠন

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২১

  • শেয়ার করুন

কুমিল্লায় পূজামন্ডপে কোরআন পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে পুলিশ ও বিক্ষুব্ধ জনতার মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত তিনজনের জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনা তদন্তে আজ বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তিরা হলেন হাজীগঞ্জ পৌরসভার রান্ধুনীমুড়ার ফজলুল হকের ছেলে হৃদয় (১৪), তাজুল ইসলামের ছেলে আল আমিন (১৮) এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুন্দরপুর গ্রামের শামসুল হকের ছেলে বাবলু (৩৫)।মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাজীগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। একই সঙ্গে ওই রাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কুমিল্লায় পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগ ছড়িয়ে রাত ৮টার দিকে একদল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজার থেকে শ্রীশ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়ার গেটে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে তাদের সঙ্গে আরো অনেকে যোগ দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য প্রথমে লাঠিপেটা করে। উত্তেজিত জনতা এ সময় পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে।

এক পর্যায়ে হামলাকারীরা হাজীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পাশে ইসকন মন্দিরের গেটে ইটপাটকেল ছোড়ে। সেখানে গিয়েও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরই মধ্যে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের সঙ্গে যোগ দেন চাঁদপুর থেকে আসা পুলিশ সদস্যরা। রাত সাড়ে ১০টার দিকে পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত হয়।

এর আগে দুই ঘণ্টা ধরে মন্দিরে হামলার চেষ্টা এবং পুলিশের সঙ্গে ধাওয়াধাওয়ি চলে। ইটের আঘাতে বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হয়। পুলিশ রাবার বুলেট ছোড়ে।

হাজীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহেল মাহমুদ রাত সাড়ে ১০টায় কালের কণ্ঠকে জানান, তিনিসহ ১৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শোয়েব চিশতি জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গুলিবিদ্ধ আটজনকে নিয়ে আসা হয়েছে।

কুমিল্লায় আহত ৩০

এর আগে গতকাল কুমিল্লা নগরীতে পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার অভিযোগে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ও ক্ষুব্ধ লোকজনের মধ্যে ধাওয়াধাওয়ির ঘটনা ঘটে। লোকজন পুলিশ ও পূজামণ্ডপ লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। এ সময় অন্তত তিনটি পূজামণ্ডপে ভাঙচুর হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এতে ৩০ জন আহত হয়েছে। আহত কয়েকজনকে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কুমিল্লার ঘটনায় সন্ধ্যায় ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে সবাইকে সম্প্রীতি ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করেছে।

আমাদের কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাবসহ বিপুলসংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়কে যান চলাচল ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।

দুপুরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তাঁরা স্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠক করেন।

কুমিল্লা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমি মুসলমান ভাইদের অনুরোধ করব—এ বিষয় নিয়ে আর যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। প্রশাসন আমাদের সঙ্গে বসেছে, বিষয়টি তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সবাই শান্ত থাকুন।’

হামলার ঘটনায় দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার এবং শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

জকিগঞ্জে সংঘর্ষ

কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে সিলেটের জকিগঞ্জের কালিগঞ্জে গত রাত ৮টায় বিক্ষোভ মিছিল থেকে উত্তেজিত জনতা উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জকিগঞ্জ থানার ওসির গাড়ী ভাঙচুর করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আহমদ, একাধিক পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩০-৩৫ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

সাম্প্রদায়িক উসকানির ঘটনায় যারাই জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং তাদের কেউ ছাড় পাবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় মহাষ্টমী শুভেচ্ছা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি কুমিল্লার ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কাজ হিসেবে উল্লেখ করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা হিন্দুদের মন্দিরে হামলা চালায় তারা দলীয় পরিচয়ের হলেও ছাড় দেওয়া হবে না। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এ দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যারা নষ্ট করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন