২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার,সকাল ৭:০৮

খুলনার ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনি পৌরসভা গঠনের কার্যক্রম শুরু

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২০

  • শেয়ার করুন

এ কে আজাদ, কপিলমুনি (খুলনা) প্রতিনিধিঃ

খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলায় নতুন একটি পৌরসভা গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাইকগাছার ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ কপিলমুনিতে বিনোদগঞ্জ পৌরসভা গঠনের লক্ষ্যে বিস্তারিত তথ্য চেয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয় থেকে খুলনা জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

আজ সোমবার এলজিআরডি মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন-২০০৯ এর ৩ ও ৪ নং ধারা অনুযায়ী পাইকগাছা উপজেলাধীন বিনোদগঞ্জ পৌরসভা গঠনের লক্ষ্যে বিস্তারিত তথ্যসহ প্রয়োজনীয় মতামত প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। চিঠিতে পৌরসভা গঠনের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত এলাকার সুস্পষ্ট তফশীল, এলাকার জনসংখ্যা, স্থানীয় মানুষের আয়ের উৎস্য ও অকৃষি কাজে নিয়োজিত জনসংখ্যার হারসহ অন্যান্য তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শতবর্ষ আগে বিংশ শতকের গোড়ার দিকে এলাকার বরেণ্য ব্যবসায়ী রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু কপিলমুনিবাসীর সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তুলেছিলেন প্রয়োজনীয় সকল সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। রায় সাহেবের প্রচেষ্টাতেই কপিলমুনি হয়ে ওঠে ওই অঞ্চলের অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্র। এই কপিলমুনির রয়েছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সশস্ত্র যুদ্ধে জয় এবং গণআদালতের রায়ের মাধ্যমে দেড় শতাধিক যুদ্ধপরাধীর শাস্তি কার্যকর করার গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস। আধুনিক কপিলমুনির স্বপ্নদ্রষ্টা রায় সাহেবের জীবণাবসানের পর নানান বাস্তবতায় তাঁর উদ্যোগগুলো প্রায় মুখথুবড়ে পড়ে। তবে সম্প্রতি এলাকার নতুন প্রজন্ম, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, জনপ্রতিনিধিবৃন্দসহ সকল সমাজ সচেতন মানুষ কপিলমুনির পুরানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। তারা সকল ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধাসহ একটি আধুনিক কপিলমুনি গড়তে আগামী শতবর্ষের জন্য একটি মাস্টার প্লান (কর্মপরিকল্পনা) তৈরির প্রস্তাব করেছে। এজন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কপিলমুনিকে পৌরসভায় রূপান্তর করার দাবি তোলা হয়েছে।

এ বিষয়ে দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল ভদ্র। তিনি জানান, অহেলিত কপিলমুনির উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ের লক্ষ্যে স্থানীয় সকল শ্রেনী-পেশার মানুষের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে গত ১৫ নভেম্বর কপিলমুনিতে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ওই উপজেলার কৃতি সন্তান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব তপন কান্তি ঘোষ। সেখানে অন্যান্য দাবির সঙ্গে পৌরসভা গঠনের দাবি উঠে আসে। সচিব মহোদয় ওই সকল দাবি বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস দেন। যে উদ্যোগের অংশ হিসেবে পৌরসভা গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু প্রতিষ্ঠিত ভরতচন্দ্র হাসপাতালটি স্বনামে ফিরিয়ে উন্নয়ন কাজ কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু ও সচিব তপন কান্তি ঘোষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নিখিল ভদ্র বলেন, এমপি আক্তারুজ্জামান বাবু নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নেন। বিশেষ করে ঐতিহাসিক যুদ্ধক্ষেত্র কপিলমুনির উন্নয়নে সংসদের ভিতরে-বাইরে ভূমিকা রাখছেন। যুদ্ধক্ষেত্রটি সংরক্ষণ ও সেখানে নতুন স্থাপনা নির্মাণ ও বীরাঙ্গনা গুরুদাসির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায়ে এমপি ও সচিব মহোদয় ভূমিকা রাখছেন। কপিলমুনিসহ ওই এলাকাকে ঘিরে পর্যটন জোন গড়ে তোলা ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। ওই সকল কার্যক্রম এলাকার উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন