২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার,রাত ১০:৫৯

খুলনাবাসীর বহু প্রতীক্ষিত ভৈরব সেতুর নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু

প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২১

  • শেয়ার করুন

অবশেষে খুলনাবাসীর বহু প্রতীক্ষিত ভৈরব সেতুর আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হলো কর্মযজ্ঞ। ২৫ নং পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের মধ্যদিয়ে আজ থেকে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
সোমবার (২৪ মে) দুপুর সোয়া ১২টায় সেতুর পূর্ব সাইড দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব-সংলগ্ন ঈদগায়ের মধ্যে ২৫ নম্বর পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুর কাজ শুরু হয়েছে।

এর আগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কয়েক দফা প্রস্তুতি নিয়েও ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ার কারণে টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ শুরু করতে পারেনি। অবশেষে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হলো।

গত ২১ মে সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব সেতুর এলাকা পরিদর্শনে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করার নির্দেশনা প্রদান করেন। এরপর সেতুর পূর্ব সাইড নগরীর রেলিগেট ঢাকা ট্রেডিং হাউস লিমিটেডের অভ্যন্তরে ১৩ এবং ১৪ নম্বর পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ শুরু হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর ‘ভৈরব সেতু’ নামে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এরপর ২০২০ সালের ২৭ জুলাই খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ভৈরব নদীর ওপর সেতু নির্মাণকাজের দরপত্র আহ্বান করেন। প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশন লি. (করিম গ্রুপ) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ভৈরব সেতুর নির্মাণকাজ দেওয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়।

এর ১৩ দিন পর উক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ পাওয়ার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর পূর্ব সাইড দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনাইটেড ক্লাব মাঠে অফিস বেইস ক্যাম্প প্লাস স্টক ইয়ার্ড তৈরি করে সেতুর ইকুইপমেন্ট স্টক করতে শুরু করে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র, কেডিএ, পরিবেশ অধিদফতর, নগর উন্নয়ন অধিদফতরের ছাড়পত্র এবং সেতুর এলাইনমেন্ট (লে আউট) না পাওয়ার কারণে কার্যাদেশ পাওয়ার পরও সেতু তৈরির কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ছয় মাস অপেক্ষা করতে হয়।

ইতোমধ্যে উপরিউক্ত সব দফতরের (এনওসি) ছাড়পত্র মিলেছে। বাকি রয়েছে শুধু জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র, যা খুলনা জেলা প্রশাসকের (এলএ) শাখায় প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সেতুর দ্রুত বাস্তবায়ন এবং কাজের অগ্রগতির স্বার্থে সোমবার (২৪ মে) দিঘলিয়ার দেয়াড়া ঈদগাহের সরকারি খাসজমির ওপর ২৫ নম্বর পিলারের টেস্ট পাইলিংয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো খুলনাবাসীর আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের ভৈরব সেতুর নির্মাণ কর্মযজ্ঞ।

সওজ সূত্রে জানা যায়, ভৈরব সেতুর পিলার বসবে ৩০টি। এর মধ্যে নদীর পশ্চিম সাইড অর্থাৎ নগরীর কুলি বাগান থেকে রেলিগেট ফেরিঘাট পর্যন্ত ১ থেকে ১৪ নম্বর পিলার বসবে। এই অংশের প্রথম পিলারটি বসবে নগরীর কুলিবাগান আকাঙ্ক্ষা পাট গোডাউনের কর্নারে। ৫ ও ৬ নম্বর পিলারের মাঝখান দিয়ে রেললাইন ক্রস করবে। এরপর পর্যায়ক্রমে ৭ ও ৮ নম্বর পিলার বসবে। ৯ থেকে ১৩ নম্বর, এই পাঁচটি পিলার বসবে নগরীর রেলিগেট ঢাকা ট্রেডিং হাউস লিমিটেডের অভ্যন্তরে। ফলে রফতানিকারক এ প্রতিষ্ঠানটি ভাঙা পড়বে।
১৭ থেকে ২৮ নম্বর পিলার বসবে ভৈরব নদীর পূর্ব সাইড অর্থাৎ দিঘলিয়া উপজেলার নগর ঘাট এবং বানিয়াঘাট ফেরিঘাটসংলগ্ন মধ্যবর্তী স্থান থেকে উপজেলা সদরের কাছে কুকুরমারা পর্যন্ত। পশ্চিম পাশের নদীর পাড় থেকে ৪২ মিটার ভেতরে ১৫ নম্বর পিলার এবং পূর্ব পাশে নদীর পাড় থেকে ১৮ মিটার ভেতরে ১৬ নম্বর পিলার বসবে। এ ছাড়া নদীর উভয় দিকে যেখান থেকে সেতুর স্লাব শুরু হবে, সেখানে এ-১ ও এ-২ দুটি এবাটমেন্ট বসবে। নদীর ভেতর কোনো পিলার বসবে না।

১৫ ও ১৬ নম্বর পিলারের ওপর ১০০ মিটার স্টিলের সিটে বসবে নদীর ওপর মূল সেতুটি। নেভিগেশনের জন্য সেতু দিয়ে যাতে অনায়াসে কার্গো ও জাহাজ চলাচল করতে পারে, সে জন্য মূল সেতুর স্লাব বটম জোয়ারের পানি থেকে ৬০ ফুট উঁচু হবে। কুকুরমারা থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত ৩৩ ফুট চওড়া অ্যাপ্রোচ রোড হবে। এ ছাড়া খুলনা যশোর রোড থেকে সেতুতে ওঠার জন্য নগরীর মহসিন মোড়ে একটি ইন্টারসেকশন বা (জংশন) তৈরি করা হবে।

ভৈরব সেতু প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে দিঘলিয়া (রেলিগেট) আড়ুয়া-গাজিরহাট তেরখাদা সড়কের (জেড ৭০৪০) প্রথম কিলোমিটার ভৈরব নদীর ওপর সেতু নির্মাণ। প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর। অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৫ নভেম্বরের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে। সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ১ দশমিক ৩১৬ কিলোমিটার।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি টাকা। দিঘলিয়া, মহেশ্বরপাশা এবং দেবনগর মৌজার ১৭ দশমিক ৪৯ একর ৭ দশমিক ০৮ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮১ কোটি টাকা। বাকি টাকা সেতু-সংক্রান্ত অন্যান্য কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেতু তৈরির কাজ শেষ না হলেও কোনো সমস্যা নেই। সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করা হবে। সে ক্ষেত্রে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে বলে জানিয়েছেন সেতুর প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী অসীত কুমার অধিকারী।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সেতু বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুজ্জামান মাসুদ, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সড়ক বিভাগ-২ মো. বেলায়েত হোসেন, উপসহকারী প্রকৌশলী সড়ক বিভাগ-২ মো. রাশিদুর রেজা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াহিদ কন্সট্রাকশনের (করিম গ্রুপ) প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী অসিত কুমার হালদার, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের প্রতিনিধি মাহাফুজা শাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এম এ রিয়াজ কচি ও মো. হাফিজুর রহমান, স্থানীয় এমপির প্রতিনিধি সৈয়দ জামিল মোর্শেদ মাসুম প্রমুখ।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন