প্রকাশিত: নভেম্বর ১২, ২০২৩
আবুল হাসান, মোংলা : বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার সোনাইলতলা ইউনিয়নের জয়খাঁ গ্রামের বিধবা নারী রিনা মালাকার (৩৫)। এক সময়ে নুন আনতে পান্তা ফুরাতো তার। কিন্তু একটি ছাগল পেয়ে তার সেই অভাব ঘুঁছে গেছে। একই গ্রামের মাজেদা বেগমও ছাগল পেয়ে পরিবারের সমস্যাসহ ছেলে মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ পুষিয়ে নিচ্ছেন। ১২০টি পরিবার ছাগল ও ভেড়া পালন করে তাদের সংসারের অভাব অনটন দূর করে যাচ্ছেন। এরমধ্যে সবজি চাষ করেও ভাগ্য বদলেছেন অনেকে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘ফ্রেন্ডশিপ’ তাদের পাশে দাড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্থ অসংখ্য দরিদ্র মানুষের উপকার করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
রবিবার (১২ নভেম্বর) জয়খাঁ গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেউ ছাগল পালন কেউ ভেড়া পালন এবং কেউ লবনাক্ত জমিতে শীতকালিন সবজি চাষ করছেন। এই কাজে কর্মসংস্থান সৃষ্টি আর ভাল ফলন হওয়ায় ন্যায্য মূল্যও পাচ্ছেন তারা। শিরিনা বেগম নামে এক নারী বলেন, চারজনের সংসারে তার স্বামী অসুস্থ হয়ে ঘরে বসে আছে। ফ্রেন্ডশিপ থেকে বিনামূল্যে একটি ছাগলের বাচ্চা দেওয়া হয় তাকে। সেই ছাগল থেকে আরও তিনটি বাচ্চা হয়। ছাগলের দুধ বিক্রি এবং দুটি ছাগল বিক্রি করে তার সংসারের অভাব কিছুটা দূর হয়েছে।
প্রশান্ত মন্ডল নামে এক ব্যক্তি বলেন, অভাবের সংসারে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ফ্রেন্ডশিপ থেকে একটি ভেড়ার বাচ্চা দেওয়া হয় তাকে। সেটি থেকে ১৫টি বাচ্চা হয় মেয়ের লেখাপড়া শেষ করে তাকে বিয়ে দিয়েছি। তন্দ্রা মন্ডল নামে এক নারী বলেন, আমাদের গ্রামের বেড়িবাঁধটি অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে ভেঙ্গে যায়। ফলে তাদের এক একর কৃষি জমি নষ্ট হয়। পরে ফ্রেন্ডশিপ থেকে বিনামূল্যে তাদের শীতকালিন সবজির বীজ দেওয়া হয়। সেই বীজ লাগিয়ে নানা রকম শাক সবজি ফলন পেয়েছেন তিনি। এখন তার স্বামীর একার আয়ের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছেনা। লিটন মন্ডল নামে এক যুবক বলেন, শুধু সবজির বীজ নয়, আধুনিক পদ্ধতিতে শাক সবজি উৎপাদন এবং কেঁচো সার তৈরীর প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর তার বসত বাড়ীতে সবজি উৎপাদন করে এ বছর ২৪ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। যা তার সংসারের ব্যয়ভার বহন করে কিছু টাকা সঞ্চয়ও করেছেন।
নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ এই এলাকার অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, নদী ভাঙ্গনের প্রভাব এবং লবনাক্ততাই তাদের পিছিয়ে থাকার প্রধান কারণ। প্রতিবছর অতিরিক্ত জোয়ারের লবন পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ বেঁড়িবাধ দিয়ে প্রবেশ করে কৃষি ফসল নষ্ট করে দেয়। ফলে কৃষিনির্ভর পরিবারগুলো পড়ে চরম সংকটে পড়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সোনাইলতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নারজিনা বেগম বলেন, সরকারের উন্নয়নের পাশাপশি উপকূলীয় সুবিধাবঞ্চিত এই জনপদের জীবনমান এবং পারিবারিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দীর্ঘদিন সমমর্যদাসহ পূর্ণ জীবনমান প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ফ্রেন্ডশিপ ট্রানজিশনাল ফান্ড কাজ করে যাচ্ছে। তাদের সহযোগিতায় এই এলাকার দরিদ্র মানুষেরা ছাগল, ভেড়া পালন ও সবজি চাষে তাদের পরিবারের আয়বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ ট্রান্সজিশনাল ফান্ডের প্রজেক্ট ম্যানেজার জুয়েল হাসান বলেন, ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গের সহায়তায় দরিদ্র পরিবারের আয় রোজগার নিয়মিতকরণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন এবং স্থানীয় অবকাঠামো উন্নয়নে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। তারা জয়খাঁ গ্রামের ১২০ টি দরিদ্র পরিবারকে বিনামূল্যে ছাগল, ভেড়া ও সবজির বীজ বিতরণ করে আয় বৃদ্ধিমূলক কাজের সুযোগ সৃষ্টি ও দূর্যোগ সহনশীল সক্রিয় সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে দরিদ্রতা দূরিকরণ ও জীবিকার মান উন্নয়ন করছেন।
মোংলা উপজেলার উপ সহকারি প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ ইউনুস আলী বলেন, ফ্রেন্ডশিপ দরিদ্র পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে যেসব প্রাণী এবং শীতকালিন সবজি দিচ্ছেন তা অত্যান্ত প্রশাংসামূলক কাজ। তারা শুধু এসব দিয়ে যাচ্ছে না, এসবের প্রশিক্ষণও প্রদান করছেন। ফলে এই পরিবারগুলোতে স্বল্প সময়ে অধিক আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় লবনাক্ত মাটিতে ভালোমানের সবজি বীজ বিতরণ করে চাষাবাদে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এতে করে এই জনপদের মানুষ স্বাবলম্বী হচ্ছেন।