১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার,রাত ১২:২৮

মানবাধিকার নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগের জায়গায় বাংলাদেশ নেই

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২২

  • শেয়ার করুন

বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম এবং নির্যাতনের নানা অভিযোগ এনে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল জাতিসংঘ। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের দেয়া প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও শুনানির পর এ উদ্বেগের কথা জানিয়েছিল সংস্থাটির মানবাধিকার বিষয়ক কমিটি। তবে এবার বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নাম নেই। অর্থাৎ মানবাধিকার নিয়ে সংস্থাটির উদ্বেগের জায়গায় নেই বাংলাদেশ।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। বাংলাদেশে তার চার দিনের সফর শেষ হয় গত বুধবার (১৭ আগস্ট)। এদিন ঢাকায় সাংবাদিকদের ‍মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্তের উপদেশের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়েও সবক দিয়েছিলেন মিশেল। তবে সফর শেষ করে ফিরে যাওয়ার সপ্তাহ পার হতেই এখন ভিন্ন সুর তার।

আগামী ৩১ আগস্ট জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের প্রধান হিসেবে চার বছরের মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে মিশেল ব্যাচেলেটের। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের দৃষ্টিতে নিজের মেয়াদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি কথা তুলে ধরেন ব্যাচেলেট।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক এই হাইকমিশনারের সর্বশেষ প্রতিবেদনে, মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে এমন বিভিন্ন দেশের কথা উল্লেখ করা হলেও সেখানে বাংলাদেশের নাম নেই। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে, যেসব দেশে গুম, হত্যার মতো বিশেষ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে; তাদের নামও উঠে আসে। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম আসেনি।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশে সফরে আসা জাতিসংঘের মানবাধিকার দলকে মানবাধিকার বিষয়ে যেসব তথ্য-উপাত্ত দেয়া হয়েছিল, সেগুলো তারা গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়েছেন। যার প্রতিফলন ঘটেছে মিশেলের রিপোর্টে।

এর আগে, গত রোববার (১৪ আগস্ট) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ব্যাচেলেটের সঙ্গে বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ওই বৈঠকের পর আইনমন্ত্রীও সাংবাদিকদের বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেননি। তবে উভয় পক্ষ এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে বলে জানান তিনি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের রিপোর্টের বড় অংশজুড়ে রয়েছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের কথা। এতে বলা হয়, মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও মানবিক বিপর্যয়ের ফলে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ১১ লাখের বেশি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। রিপোর্টে মিয়ানমারে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দেশটির জান্তা সরকারকে দায়ী করে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে মিশেলের রিপোর্টে রিপাবলিক অব কঙ্গোর যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের কথা উল্লেখ করা হয়। বলা হয় জলবায়ু পরিবর্তন এবং অবৈধ মাইনিংয়ের কারণে নানা ঝুঁকিতে থাকা পেরুর আদিবাসীদের অধিকারের কথা। আফ্রিকার বুরকিনা ফাসোতে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষদের অসহায়ত্বের কথাও উল্লেখ করা হয়।

ভেনিজুয়েলায় ২০১৭ সালে প্রতিবাদ সমাবেশে এক তরুণের নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি বসনিয়ায় ২৭ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া এক তরুণের কথাও উঠে আসে মিশেলের রিপোর্টে। এতে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে সে কথাও উল্লেখ করা হয়। ইউক্রেনে আক্রমণ বন্ধের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে, উভয় পক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনের নীতি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করেছে জাতিসংঘ।
বাংলাদেশ সফর করা জাতিসংঘের প্রথম মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান হলেন মিচেল ব্যাচেলেট। এ সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ সরকারের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের আমলে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে শত শত মানুষ বিচার বহির্ভূত হত্যা অথবা গুমের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তবে বরাবরই নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা গুমের কথা অস্বীকার করে আসছে সরকার।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন