প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২১
অবশেষে পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ভক্তদের চাওয়া। প্রত্যাশা ছিল কোপা আমেরিকার স্বপ্নের এক ফাইনালে খেলবে দুটি দল। প্রথম সেমিফাইনাল জিতে সেই মঞ্চটা সাজিয়ে রেখেছিল স্বাগতিক ব্রাজিল। বাকি ছিল শুধু আর্জেন্টিনার প্রত্যাশা পূরণের। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে কলম্বিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়েই তারা নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মহারণ!
এমন প্রত্যাশা পূরণের পেছনে বড় অবদান মেসির! ব্রাজিলে এবার দেখে মনে হচ্ছিল, নতুন একটা মানদণ্ড নির্ধারণ করতেই যেন তার আগমন। অবশ্য সেটি করেছেনও। ৪ গোলের সঙ্গে করেছেন ৫টি অ্যাসিস্ট! এর আগে কোপায় এত অ্যাসিস্ট করেনি কেউ!
শুরুতেই মেসির অ্যাসিস্টে দলকে লিড এনে দেন লওতারো মার্তিনেস। আর টাইব্রেকারে গড়ানো ম্যাচে তিনটি পেনাল্টি শ্যুট আউট প্রতিহত করে আলবিসেলেস্তেদের জয় এনে দেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস।
ব্রাসিলিয়ার মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়ামে নির্ধারিত সময়ে ১-১ সমতায় থাকা ম্যাচে, টাইব্রেকারে কলম্বিয়াকে ৩-২ ব্যবধানে হারায় লিওনেল মেসির দল। এতে কোপা আমেরিকার স্বপ্নের ফাইনালে ব্রাজিল মোকাবেলা করবে আর্জেন্টিনা। এদিন আকাশী-সাদাদের পক্ষে খেলার শুরুতেই গোল করেন মার্তিনেস। দ্বিতীয়ার্ধে কলম্বিয়াকে সমতায় ফেরান দিয়াস।
টাইব্রেকারে শুরুতেই কলম্বিয়ার হয়ে গোল করেন কুয়াদরাদো। আর্জেন্টিনাকে সমতায় ফেরান লিওনেল মেসি। এরপর কলম্বিয়ার দু’টি শট প্রতিহত করে দলকে এগিয়ে রাখেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক। নিজেদের দ্বিতীয় শটে দে পল বারের ওপর দিয়ে মারলেও, পরের দু’টি শটে গোল পান পারেদেস ও লওতারো মার্তিনেস। এরপর কলম্বিয়া চতুর্থ শটে গোল পেলেও, তাদের পঞ্চম শট রুখে দেন মার্তিনেস। এরপরই জয়ের উল্লাসে মাতে আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার পঞ্চম শটের প্রয়োজন হয়নি।
এদিন খেলার শুরু থেকে আক্রমণাত্মক কৌশলে খেলতে থাকে আর্জেন্টিনা। এরই সুবাদে চতুর্থ মিনিটেই কলম্বিয়া শিবিরে কাঁপন ধরায় মেসি। প্রতিপক্ষের তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডি বক্সে ঢুকে পেনাল্টি স্পটের কাছে নিকোলাসকে পাস করেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। তবে তার হেড একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এর তিন মিনিট পরেই লিড নেয় আকাশী-সাদারা। সোলসোর কাছ থেকে ডি বক্সে বল পেয়ে লওতারো মার্তিনেসকে পাস করেন মেসি। সেখান থেকে এক আড়াআড়ি শটে গোল করেন ইন্টার মিলানের এই স্ট্রাইকার।
চলতি আসরে এটি মেসির পঞ্চম অ্যাসিস্ট; যা কিনা কোপা আমেরিকায় রেকর্ড। কোপা আমেরিকার ইতিহাসে সর্বোচ্চ চারটি ছাড়িয়ে মেসির অ্যাসিস্ট এখন পাঁচটি।
লিড নেয়ার পর খেলার গতি কমে যায় আর্জেন্টিনার। এতে সুবিধা নিতে থাকে কলম্বিয়া। ৩৮তম মিনিটে কলম্বিয়ার দুটি চেষ্টা ব্যর্থ হয় পোস্টে লেগে।
বিরতি থেকে ফিরে আরো বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠ কলম্বিয়া। একের পর এক চেষ্টায় ৬১ তম মিনিটে সমতায় ফেরে তারা। নিজেদের অর্ধ থেকে বাড়ানো ফ্রি কিকে আর্জেন্টিনার ডি বক্সে বল পেয়ে দারুণ নৈপূণ্যে গোল করেন লুইস দিয়াস। সমতায় ফেরার পরই কিছুটা রক্ষণাত্মক কৌশলে খেলতে থাকে কলম্বিয়া।
আনহেল দি মারিয়া বদলি নামার পর আক্রমণে গতি বাড়ে আর্জেন্টিনার। ৭৩তম সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট করেন লওতারো মার্তিনেস। গোলপোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসা ওসপিনাকে এড়িয়ে মার্তিনেসকে পাস করেন দি মারিয়া। কিন্তু গোললাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বারিওস বরাবর শট নেন মার্তিনেস।
৮১তম মিনিটে দি মারিয়ার পাস থেকে মেসির চেষ্টা পোস্টে লেগে ফিরে আসলে আবারো গোলবঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। বাকি সময়ে গোলের তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কোনো দলই। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
এই জয়ে ১৪ বছর পর কোপা আমেরিকার ফাইনালে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। আগামী রোববার রিও দে জেনেইরোর মারাকানা স্টেডিয়ামে শিরোপা নির্ধারণী মুখোমুখি হবে ফুটবলের এই দুই পরাশক্তি।