২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার,সকাল ৮:৫৯

সাতক্ষীরায় শিশু ধর্ষণের চেষ্টা, ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না পরিবারের সদস্যরা নির্যাতনকারি মাদক ব্যবসায়ি ও শিশু অপহরণ মামলার আসামী

প্রকাশিত: মে ৭, ২০২২

  • শেয়ার করুন

এম জিয়াউল ইসলাম জিয়া ঃ চার বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনকারি একজন মাদক ব্যবসায়ি ও পঞ্চম শ্রেণীর এক শিশু অপহরণ, তার মাকে নির্যাতনের পৃথক মামলার আসামী হয়ে গ্রাম ছাড়া হওয়ায় তার ভয়ে গত সাত দিনেও মুখ খুলতে সাহস পায়নি ওই পরিবারের সদস্যরা।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা ইউনিয়নের কুলাটি গ্রামের ফজর আলী ও রবিউল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, পার্শ্ববর্তী পুটিমারার বিলে দেবহাটা উপজেলার টিকেট গ্রামের মাছ চাষী রামপ্রসাদ মন্ডলের কাছ থেকে দু’ বিঘা জমি ধান চাষ করার জন্য ভাগে নেন কুলাটি গ্রামের এক দরিদ্র দম্পতি। গত ৩০ এপ্রিল দুপুর দু’ টোর দিকে ওই দম্পতি তাদের চার বছরের মেয়েকে নিয়ে ধান কাটতে আসেন। দুপুর দু’টোর দিকে ওই শিশুটিকে ঘেরের বাসায় শুইয়ে রাখেন বাবা – মা। এ সময় তাদের গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মিঠুনের বাড়ির ভাড়াটিয়া মাদক ব্যবসায়ি আবু তালেব ওই শিশুটির হাত ও পা বেঁধে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। বাচ্চাটির চিৎকারে তার বাবা, মা ও অন্যরা ছুঁটে এলে দৌড়ে মাদক মামলায় জেল হাজতে থাকা জোহর আলীর বাড়ির টিনের বাক্সের মধ্যে আত্মগোপন করে আবু তালেব। কিছুক্ষণ পর আবু তালেবের ছেলে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ি তুহিন এসে বাবাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানানো হলে কুলাটি গ্রামের আজগারের মাধ্যমে নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের ম্যানেজ করে ফেলে তুহীন। একপর্যায়ে রক্তাক্ত ওই শিশুটিকে তার নানার বাড়ি সদর উপজেলার ফিংড়িতে পাঠিয়ে সেখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তবে নির্যাতিতা ওই শিশুটির দাদী ও স্বজনরা জানান, আবু তালেবের সামাজিক সম্মান নেই। সে ও তার ছেলে তুহীন বড় মামলার আসামী। তাই মেয়েটির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তারা আর বেশিদূর এগোতে চান না।

তবে কুলারাটির মাছের ঘের করেন এমন কয়েকজন জানান, আবু তালেব ও তার ছেলে তুহীন তাদের গ্রামে বসবাস করার পর এলাকায় মাদকের ছড়াছড়ি। প্রতিবাদ করলেই তাদের ঘেরে বিষ দেওয়া হতে পারে এমন আশঙ্কায় তারা প্রতিবাদ করার সাহস পান না।

এদিকে মাহমুদপুর নাটা পাড়ার বাবলুর রহমান জানান, গ্রামের নাটা পাড়ার শওকত নাটার ছেলে আবু তালেব একজন মাদক ব্যবসায়ি। তার বড় ছেলে তুহীন বর্তমানে এলাকার কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ি। রাস্তার ধারে বাড়ি সংলগ্ন জমিতে তাদের ছোট একটি মুদি দোকান রয়েছে। দোকানের পাশ দিয়ে তুহীন ও তার সহযোগী মাদক ব্যবসায়িরা মালামাল নিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রতিবাদ করতেন তারা। একপর্যায়ে ২০২০ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার দিকে তুহিনের ছেলে মাহমুদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র রানা সহপাঠী হিসেবে তার (বাবলু) ছেলে মেহেদী হাসানকে (১১) ফুচকা খাওয়ানোর কথা বলে পার্শ্ববর্তী একটি পুকুর পাড় থেকে ডেকে নিয়ে যায়। প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে ছেলে বাড়ি না আসায় রাত সাতটার দিকে তিনি বাড়িতে যেয়ে রানার কাছে মেহেদীর কথা জানতে চান। রানা বলে মেহেদী মাছ ধরতে গেছে। পরে তারা খবর পান যে বুলারাটি জামে মসজিদের সামনে থেকে তুহীনসহ কয়েকজন মোটর সাইকেলে করে নিয়ে গেছে মেহেদীকে। আবু তালেব ও তার ছেলে তুহীন তাকে হুমকি দিয়ে বলে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে ফল ভাল হবে না। একপর্যায়ে আবু তালেব ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপন করে।

বাবলুর রহমান আরো জানান, সম্ভাব্য সকল জায়গায় মেহেদীকে খুঁজে না পেয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগম বাদি হয়ে ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আবু তালেব, তার স্ত্রী আলেয়া খাতুন ও তাদের ছেলে তুহীনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় জিআর- ৬৫৩/২০ নং মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পিবিআই এর উপপরিদর্শক রইচউদ্দিন আবু তালেব ও তুহীনকে গ্রেপ্তার করেন। তুহীনকে এক দিন করে দু’ দফায় রিমান্ডে নেওয়া হয়। দীর্ঘ সাড়ে চার মাস পর তারা হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পায়। ঘটনার ১৫ মাস পর আলেয়া খাতুনকে আদালতে আত্মসমর্পণ করানো হলে তার জামিন না’মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানো হয়। দু’ মাস জেল হাজতে থাকার পর আলেয়া খাতুন জামিনে মুক্তি পান। তবে দীর্ঘ ২০ মাসেও তার ছেলের সন্ধান পাননি তিনি।

বাবলুর রহমানের স্ত্রী মমতাজ বেগম জানান, তিনি তার ছেলে মেহেদী অপহরণ মামলার বাদি হওয়ায় তাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামীরা নানভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। মাহমুদপুর গোয়ালপাড়ার আলমের স্ত্রী ময়না সুমী তার কাছে মোবাইল করে মেহেদীর কথা জানতে চায়। বিষয়টি মামলার তদন্তকারি কর্মকর্র্তাকে জানানোর পর তিনি ময়না সুমীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ময়না সুমি জানায় যে তার স্বামী আলম, গাঙনিয়া ব্রীজের পাশের বাসিন্দা ফারুক হোসেন, গোয়ালপাড়ার ইসরাফিল, মাহমুদপুরের হান্নান, তুহীন একত্রিত হয়ে মেহেদীকে তার বাসায় দু’দিন আটক রাখে। পরে তাকে অন্যত্র নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আসামী হিসেবে ময়না সুমি ও সাক্ষী হিসেবে তার মেয়ে আাঁখি মনি বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহারের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। আসামীরা তাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিলে তিনি সদর থানায় ৯২০/২০, ১৬/২১, ৩৯৯/২১, ১১৪/২২, ১৫১/২২ ও ৬৮৮/২২ নং সাধারণ ডায়েরী করেছেন। স্বামী বাড়ি না থাকায় চলতি বছরের ৩০ মার্চ সকাল ৮টার দিকে তুহীন, তার বাবা আবু তালেব, ভাই বাবু, তালেবের স্ত্রী তুহিনা, তুহিনের বড় ভগ্নিপতি ইব্রাহীম, বোন হোসেনেয়ারা বাড়িতে এসে তার উপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়। মামলা তুলে না নিলে ও এক লাখ টাকা চাঁদা না দিলে তাকে খুন করার হুমকি দিয়ে চলে যায় তারা। রাতেই তিনি ওই ছয় আসামীর নাম উল্লেখ করে থানায় জিআর-২৪৯/২২ নং মামলা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আবু তালেবকে গ্রেপ্তার করে। অন্য তিনজন আদালত থেকে জামিন নিলেও তুহীন ও ইব্রাহীম প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে গ্রেপ্তার এড়াতে ও মাদক ব্যবসার সুবিধার্থে জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে তুহীন তার স্ত্রী ও বাবাকে নিয়ে কুলাটির মিঠুনের পরিত্যক্ত বাসা ভাড়া নিয়ে তা সংস্কার করে বসবাস করছে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামানের সঙ্গে আসামীরা প্রকাশ্যে থাকার পরও কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না তা জানা সম্ভব হয়নি।

মমতাজ বেগম আরো জানান, মামলা তুলে না নেওয়ায় গত ২৮ এপ্রিল দিবাগত রাত দু’টোর দিকে তুহীন তাদের কাঠের ঘরে আগুন লাগিয়ে তাকেসহ তার স্বামী, মামলার সাক্ষী ও তদ্বিরকারক সোলাইমানসহ ২২ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করে। ঘটনার সত্যতা না পেয়ে পুলিশ মামলা নেয়নি। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশায় ও আসামীদের ভয়ে স্বামী, বড় মেয়ে, জামাতাকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন তিনি।

মেহেদী অপহরণ মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পিবিআই এর উপপরিদর্শক রইচউদ্দিন বলেন, ভিকটিম উদ্ধারের ব্যাপারে তারা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। উদ্ধার সম্ভব না হলে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।#

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন