প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২১
এম জিয়্উাল ইসলাম জিয়া,ভোমরা(সাতক্ষীরা)ঃ জীবন বিধ্বংসী করোনা ভাইরাসের করাল গ্রাসের মুখোমুখী হয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহের তাগিদে রাস্তায় নামছে স্থলবন্দর ভোমরার প্রান্তীক শ্রমমুখী মানুষ।আর্থিক দৈনদশা ও পারিবারিক অভাব অনটন নিরসনে করোনাযুদ্ধের পাশাপাশি শ্রমযুদ্ধে নেমে পড়ছে হাজার হাজার দিনমজুর, হ্যান্ডলিং শ্রমিক, সিএন্ডএফ কর্মচারীসহ সর্বস্তরের কর্মমুখী সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ। সাতক্ষীরার স্থলবন্দর ভোমরা সীমান্তের বিপরীতে ভারতের উত্তর-চব্বিশ পরগনা জেলার পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আমদানী পণ্য নিয়ে ভারতীয় ট্রাক চালকরা করোনা ভাইরাসের নমুনা ও উপসর্গ সংক্রমন প্রতিরোধের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই বাংলাদেশের ভোমরা স্থলবন্দরে প্রবেশ করছে। ভারতের মহাসংক্রমিত ভেরিয়েন্ট করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে ভুগছে ভোমরা বন্দরবাসী। স্থলবন্দর ভোমরা সীমান্তের বিপরীতে স্থলবন্দর ঘোজাডাঙ্গা সীমান্তে করোনা ভাইরাসের নমুনা ও উপসর্গ সনাক্তকরনে নেই কোনো ব্যবস্থা।ফলে ভারতীয় আমদানীকৃত পণ্যবাহী ট্রাক চালকরা নমুনা ও উপসর্গ পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই ভোমরা স্থলবন্দরে প্রবেশ করছে ঝুঁকি নিয়ে। যে কারনে ভারতীয় করোনা ভাইরাসের মহাসংক্রমিত ভেরিয়েন্ট ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে ভুগছে ভোমরা বন্দরবাসী। তবে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক চালকদের নমুনা ও উপসর্গ পরীক্ষা করার জন্যে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট অভ্যন্তরে খোলা হয় একটি পরীক্ষাকেন্দ্র। ভারতীয় ট্রাক চালকরা স্থলবন্দরে প্রবেশের আগেই এই পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে তাপমাত্রা নির্ণয় করে।স্বাস্থ্য পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীরা ভারতীয় ট্রাক চালকদের প্রাথমিক তাপমাত্রা নির্ণয় করে ছেড়ে দেয়। এরপর ট্রাক ড্রাইভাররা পণ্যবাহী গাড়ী নিয়ে স্থলবন্দর পার্কিং ইয়ার্ডে প্রবেশ করে। এ ব্যাপারে ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত সদর উপজেলা উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার স্বপ্না রাণী মন্ডল জানান, প্রতিদিন ভারত থেকে আড়াইশ থেকে তিনশ পণ্যবাহী ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করে। ভারতীয় প্রত্যেকটি ট্রাক চালকদের অটো স্ক্যানারের মাধ্যমে তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয়। কোনো ট্রাক চালকের নির্ধারিত তাপমাত্রার চেয়ে অধিক তাপমাত্রা নির্ণিত হলে তাদেরকে পুনরায় ভারতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আর যাদের নির্ধারিত তাপমাত্রা থাকে তাদেরকে টোকেন দিয়ে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ জানিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে স্বাস্থ্য পরীক্ষাকেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত আর এক কর্মকর্তা সদর উপজেলা মেডিকেল টেকনোলজি স্যানেটারি ইন্সপেক্টর আবুল কাশেম জানান, ভারতের প্রতিটি ট্রাক চালককে প্রাথমিকভাবে অটো স্ক্যানারের মাধ্যমে তাপমাত্রা নির্ণয় করা হয়। তবে এ পর্যন্ত অধিক তাপমাত্রা নির্ণিত কোনো ভারতীয় ট্রাক চালক সনাক্ত হয়নি। তাছাড়া সর্দি, কাশি, জ¦র, গলাব্যাথাসহ বিভিন্ন উপসর্গ সম্পর্কে জেনে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি আরো জানান, ঘোজাডাঙ্গা স্থলবন্দরে করোনা ভাইরাস উপসর্গ ও নমুনা পরীক্ষার জন্যে কোনো ব্যবস্থা নেই। এদিকে ভারতীয় ট্রাক চালকদের করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধ বিষয়ে জানতে চাইলে, পশ্চিমবঙ্গ কলকাতার ট্রাক চালক জগদীশ বিধর (যার গাড়ি নং-ডবিøউবি-২৩,সি-৩৩২৩), উত্তর-চব্বিশ পরগনা জেলার ইটিন্ডা কলবাড়ি এলাকার ট্রাক চালক রবিউল সরদার (যার গাড়ি নং-ডবিøউবি-৯৩-০৪৫৮), নদীয়া জেলার দেব গ্রামের ট্রাক চালক ফিরোজ শেখ (যার গাড়ি নং-ডবিøউবি-৭৩ডি-৩৪৫৪), পশ্চিমবঙ্গের ঘোড়ারাষ এলাকার ট্রাক চালক আব্দুল হামিদ (যার গাড়ি নং-ডবিøউবি-২৫এ-৭৫০১) এবং পশ্চিমবঙ্গের রামপুরহাট এলাকার গাড়ি চালক এমডি মোল্লা (যার গাড়ি নং-ডবিøউবি-১৫এ-৩৬৫৯) জানান, তারা এখনো পর্যন্ত করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে কোনো ভ্যাকসিন গ্রহন করেনি এবং নমুনা ও উপসর্গ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেনি। উল্লেখিত ভারতীয় ট্রাক চালকরা আরো জানায়, বাংলাদেশের ভোমরা স্থলবন্দরে প্রবেশের পূর্বে ঘোজাডাঙ্গা স্থলবন্দর থেকে করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য তাপমাত্রার নমুনা ও উপসর্গ পরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভোমরা স্থলবন্দরে প্রবেশ করে। এরপর ভারতীয় ট্রাক চালকরা পার্কিং ইয়ার্ডে গাড়ি রেখে ইচ্ছামতো ভোমরা বন্দর বাজার, হোটেল, চায়ের দোকান ও মুদিদোকানসহ সর্বত্র অবাধ বিচরণ করে। স্থলবন্দরে কঠোর বিধিনিষেধের লকডাউনের মধ্যেও ভারতীয় ট্রাক চালকরা মুখে মাস্ক না পরে এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অবাধে ঘোরাফেরা করলেও প্রশাসনের কোনো দিকভাল নেই। ¯