২৩শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার,সকাল ১১:৫০

জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত, বহাল তবিয়তে জেলা রেকর্ড রুমে সাগর সরকার

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫

  • শেয়ার করুন

তথ্য প্রতিবেদক : চাকরীর নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ শতভাগ প্রমাণিত হওয়ার পরও বহাল তবিয়তে সরকারী চাকরী করছেন খুলনার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহায়ক সাগর সরকার। তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবার পর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলেও তা করা হয়নি বলে জানা গেছে। সাগর সরকার পোষ্টিং কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে হলেও বর্তমানে প্রেষণে রয়েছেন জেলা রেকর্ড রুমে।
প্রতারণার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী বিভাগীয় বাছাই কমিটির সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান এই প্রতিবেদন দাখিল করেন। অভিযোগ রয়েছে, এই তদন্ত প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা তার বিরুদ্ধে না নেয়া হয় এবং বিষয়টি যেনো ধামাচাপা পড়ে যায় সেজন্য তিনি অপর একজন সার্টিফিকেট পেশকারের সহায়তা গ্রহণ করেন।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালে সাগর সরকার অফিস সহায়ক পদে থেকে ১৬ নম্বর গ্রেডে ‘সার্টিফিকেট পেশকার’ পদে নিয়োগের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করেন। সেই অনুযায়ী ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষায় এবং এই মাসের ২৬ তারিখে অনুষ্ঠিত ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারী তারিখে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় বাছাই কমিটি ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরে অনুষ্ঠিত মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
মৌখিক পরীক্ষার সময় বাছাই কমিটি তার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে এবং লিখিত পরীক্ষার কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। তবে উত্তরপত্রে সঠিক উত্তর লিখে মৌখিক পরীক্ষার সময় একই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে না পারায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের সন্দেহ হয়। তারপর সেখানে তাকে কিছু লিখতে বলা হলে তার হাতের লেখার সাথে উত্তরপত্রের লেখার কোন মিল পাওয়া যায়নি।
সেখানে সাগর সরকার তার কৃতকর্ম স্বীকার করে বলেন যে, লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় তার দুই পাশে দুই জন ব্যক্তিকে বসিয়ে লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র পরিবর্তন করেন। অর্থাৎ অসদুপায় অলবম্বন করে তার উত্তরপত্র অন্য ব্যক্তির মাধ্যমে লিখে নিয়েছেন। বিষয়টি বিভাগীয় বাছাই কমিটির সামনে স্বীকার করেন। এ সময় বিভাগীয় বাছাই কমিটির সদস্য ছাড়াও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক), খুলনা, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব), খুলনা এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), খুলনা উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী “অসংগত আচরণ বা চাকুরি শৃঙ্খলার জন্য হানিকর আচরণ, অথবা সরকারি কর্মচারীদের আচরণ সংক্রান্ত বিদ্যমান বিধিমালার পরিপন্থি কোন কার্য, অথবা কোন সরকারি কর্মচারীর পক্ষে শিষ্টাচার বহির্ভূত কোন আচরণ” অসদাচরণের শামিল। বর্ণিত কর্মচারী মিথ্যার আশ্রায় নিয়ে অসদুপায় অবলম্বন করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে প্রতারণা করে চাকুরি পাওয়ার অপচেষ্টা করেছেন। এই কর্মচারীর (সাগর সরকার) এ ধরণের আচরণ সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) অনুযায়ী অসদাচরণের দায়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তদন্ত কর্মকর্তা লিখিত পরীক্ষার মূল খাতার ফটোকপি, বিভাগীয় বাছাই কমিটির সম্মুখে নিজ হাতে লেখা কাগজের ফটোকপি এবং একটি ভিডিও প্রমাণ হিসেবেও প্রতিবেদনের সাথে দাখিল করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা বর্ণিত কর্মচারী সাগর সরকার, অফিস সহায়ক, মদিনাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিস, কয়রা, খুলনা (প্রেষণে জেলা রেকর্ড রুম শাখা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, খুলনা) এর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন।
তবে এসব অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন সাগর সরকার। তিনি বলেন, এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিলো। তবুও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তবে কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিলো তা তিনি জানান নি।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন