প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২১
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নে হাটবাটী গ্রামে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন কালভার্ট নির্মাণে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সিডিউল অনুযায়ী সেন্ড ফিলিং না করেই সিসি ঢালাই এবং আর সি সি ঢালাই দিয়ে ঠিকাদারের ইচ্ছেমত কাজ করছেন এমনটাই অভিযোগ এলাকাবাসীর। তারা বলছেন, ঠিকাদার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে কাজ না করিয়ে তৃতীয় কোনো ব্যক্তির কাছে কাজটি বিক্রি করে কাজটি করছে। তাছাড়া তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী এই কাজ দেখভালে কিছুটা সুযোগ দিয়ে সংশ্লিষ্ট মিস্ত্রি তথা সাব ঠিকাদারকে চরম দুর্নীতি করার সুযোগ করে দিচ্ছে। তারা খুব দ্রুততার সাথে নামকা ওয়াস্তে কাজ শেষ করছে।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নির্মাণস্থলে নির্মাণ সংক্রান্ত তথ্যবোর্ড লাগানো হয়নি। যাতে কেউ দুর্নীতি বা অনিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে। এতে কালভার্টগুলো নির্মাণের মেয়াদকাল পর্যন্ত স্থায়ীত্ব পাবে না বলে আশংকা করছে এলাকাবাসী।
সড়ক ও জনপথ খুলনা বিভাগ গল্লামারী বটিয়াঘাটা দাকোপ নলিয়ান ফরেস্ট রোডে প্রায় ২ কোটি ১৫লাখ টাকা ব্যায়ে ২টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। এর দুটি কালভার্টই নির্মাণ করা হচ্ছে সদর ইউনিয়নে। বটিয়াঘাটা সদর ইউনিয়নের গল্লামারী বটিয়াঘাটা দাকোপ নলিয়ান ফরেস্ট রোডে বটিয়াঘাটা ইসলামিক ফাউন্ডেশন মসজিদের সামনে ১টি কালভার্ট নির্মাণ শুরু করেছে এবং অপরটির কাজ এখনো শুরু করা হয়নি। এগুলোর মোট নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ ৮১ হাজার ৫৫৯টাকা ।
সিডিউল অনুযায়ী পূর্বের কালভার্ট সম্পূর্ণ অপসারন করে কাজ করার কথা থাকলেও সেটি না করেই নিচের বেজ ঢালাই রেখেই বালি ফিলিং ইটের সোলিং না করে সিসি ঢালাই সম্পন্ন করেছে। এতে করে কালভার্টের গভীরতাও কমবে এবং পুরাতন বেজের উপর নতুন কালভার্ট নির্মাণ করায় এর স্থায়ীত্ব কমবে বলে মনে করে সচেতন নাগরিক। সিডিউলানুযায়ী ৬ মিটার উচ্চতার এই কালভার্ট নির্মাণে পূর্বের সবকিছু অপসারন করে সেন্ড ফিলিং সিসি ঢালাই এবং পরে আর সিসি ঢালাই দিয়ে মূল কালভার্টের গ্যাপ হবে ৫ মিটার। এগুলোর কোন কিছুই মানছে না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, পুরাতন কালভার্ট এর তলা না ভেঙ্গেই কাজ করছে ঠিকাদার। এমনভাবে কাজ করলে আমাদের ফসলি জমিতে পানি প্রবাহ ঠিকমত হবে না। এবং পানি অপসারণে বাধাগ্রস্থ হবে।
অপর এক স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী বলেন, দেখলাম পুরানো কালভার্টের টপটা শুধু ভাঙ্গছে আর বটম রেখেই নতুন কালভার্ট নির্মাণ করছে। এতে কালভার্টের স্থায়ীত্ব ঠিক থাকবে বলে আমার মনে হয় না। আর ঠিকাদার শুভংকরের ফাঁকি দিচ্ছে এই পুরাতন কালভার্ট পরিপূর্ণ অপসারণ না করে। এই অনিয়ম ও দুর্নীতি তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী বিষয়গুলো সঠিক তদারকি না করায় ঠিকাদার তথা মিস্ত্রিরা কোনো রকমে কালভার্ট দাড় করিয়ে দেওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছে। এতে সিডিউল নির্ধারিত উপকরণের নিয়ম মানা হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মোহাম্মাদ আমিনুল হক প্রাইভেট লিমিটেড এর মোহাম্মাদ আমিনুল হকের মুঠোফোনে পরপর দুদিন একাধিক বার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে কাজ কিনে নিয়েছে এমন পরিচয়ে শহিদুল হাসান বাবু প্রতিবেদকের সাথে যোগাযোগ করে জানান, তারা কাজটি সঠিকভাবেই করছে। তাদের কাজে কোন ত্রুটি নেই। পুরনো বেজের কথা বলা হলে তিনি বলেন ‘কাজটি আরও ভাল মজবুত হবে। সে কারণে ওটা ভাঙ্গা হয় নায়।’
তথ্যবোর্ড না লাগানোর বিষয়ে তারা বলেন, ‘অফিস থেকে সরবরাহ এবং কোনো বাজেট না থাকায় তথ্যবোর্ড লাগানো হয়নি।’
ইউনিয়ন পরিষদের হাটবাটী ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার রমা রানী মন্ডল বলেন, ‘এই সড়কে বর্তমানে অনেক যানবাহন চলাচল করে। সেক্ষেত্রে আমি চাই এখানে সম্পূর্ণ নতুন কালভার্ট নির্মাণ হোক। আর এখানে ঠিকাদার নতুন কালভার্ট নির্মাণের কাজ পেয়ে পুরানো বেজ রেখে কাজ করবেই বা কেন। এভাবে কাজ করলে আমার এলাকার জন্য এ কালভার্ট ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে আমি মনে করি। তাছাড়া সঠিকভাবে কালভার্টটি না করলে এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যাহত হবে এবং ফসলি জমির ক্ষতি হবে।’
বটিয়াঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান বাবু মনোরঞ্জন মন্ডল বলেন, ‘আমার জানা নেই তারা কিভাবে কাজটি করছে। আমি প্রয়োজনে সরেজমিন দেখে সংশ্লিষ্ঠ ইঞ্জিনিয়ারদের বিষয়টি অবগত করবো। তারা বিজ্ঞ মানুষ, তারাই ভালো বুঝবেন।’
উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু নাইম বলেন, ‘আমরা নতুন করেই কাজ করছি যেভাবে করার প্রয়োজন ঠিক সেভাবেই। পুরানো বেজের উপর নতুন কাজ করার নিয়ম আছে কিনা এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা আমি বলতে পারবো না। আমার সাব ডিভিশন যিনি আছে তার সাথে কথা বলেন তিনি ভাল বলতে পারবেন।’
সড়ক ও জনপথ খুলনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ আনিসুজ্জামান মাসুদের অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। গত দুদিনে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
খুলনা ১ আসনের সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস বলেন, ‘যেহেতু এখানে নতুন কালভার্ট নির্মাণ করা করার কথা সেহেতু কিভাবে ঠিকাদার পুরানো কালভার্টের বেজ ঢালাই এর উপর এটি নির্মাণ করে। পুরাতন কালভার্ট ঝুকিপূর্ণ বিধায় নতুন কালভার্ট নির্মাণের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটা কোনো ঠিকাদার করতে পারে না। এ বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। আমি জানলাম। সিডিউল বহির্ভূত কোনো অনিয়ম করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’