৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,সকাল ৬:১৪

খুলনায় প্রথম পর্যায়ে প্রথম ধাপে টিকা পাবেন ৯৭ হাজার, শনিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২১

  • শেয়ার করুন

খুলনায় প্রথম পর্যায়ে প্রথম ধাপে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক হিসেবে টিকা প্রদানের প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ওই টিকা ব্যবহারের জন্য নভেম্বর মাসে চাহিদার সংখ্যা উল্লেখ করে পত্র পাঠানো হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। প্রাথমিকভাবে প্রথম ধাপে ৯৭ হাজার করোনা সম্মুখসারির জনগোষ্ঠীর শরীরে এ টিকা প্রয়োগ করা হবে।

টিকাকরণ কর্মসূচি সঠিকভাবে প্রয়োগের জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণও দেয়া হবে। প্রথম পর্যায়ের টিকা প্রদান শেষ হলে ধাপে ধাপে সকলকে করোনা প্রতিষেধক এই টিকা দেওয়া হবে বলে জানান সিভিল সার্জন। চাহিদার সংখ্যা অনুযায়ী খুলনা মহানগর ও জেলার নয়টি উপজেলার করোনা সম্মুখসারির জনগোষ্ঠীর নামের তালিকা তৈরি করতে ইতিমধ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করে স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রাথমিক অবস্থায় যাদের টিকা দেওয়া হবে তাঁদের নামের তালিকা প্রস্তুত করতে আগামী শনিবার থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র, নাম ও ঠিকানা সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এদিকে নগরের টিকাকরণ কর্মসূচির কার্যক্রম পরিচালনা করবে খুলনা সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কোভিড-১৯-এর যে ডোজের টিকা সরকার কিনতে যাচ্ছে, তা মানুষকে বিনামূল্যে দেওয়া হবে। তবে কারা আগে পাবে, তা ঠিক করেছে স্বাস্থ্য সংস্থা। এই টিকা দুই থেকে আট ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণযোগ্য, যা বাংলাদেশে বিদ্যমান। প্রথম ডোজ নেওয়ার ২৮ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ করা হবে।

টিকার পর্যায়ভিত্তিক প্রাপ্যতা বিবেচনা করে প্রাথমিকভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী, তথা কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখসারির কর্মী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী, শিক্ষাকর্মী এবং গণপরিবহনকর্মীরা টিকাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। টিকাদান কার্যক্রম শুরুর আগে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর তালিকা প্রণয়ন ও টিকা প্রদানে নগর পর্যায়ে, জেলা পর্যায়ে ও উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে খুলনা স্বাস্থ্য বিভাগ।

খুলনা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় প্রাথমিকভাবে ৯৭ হাজার ২৩০ সংখ্যক করোনা মোকাবিলা সম্মুখসারির কর্মীর শরীরে টিকা দেওয়ার জন্য প্রস্ততি নেন। এর জন্য তালিকা প্রণয়ন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদা পাঠায় সিভিল সার্জনের দপ্তর।

চাহিদা অনুসারে প্রথম পর্যায়ে খুলনা সিটি করপোরেশন ও দুটি পৌরসভার ১ হাজার ৬৯০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাচ্ছেন এই টিকা। এছাড়া ওই তালিকায় খুলনায় কর্মরত সরকারি কর্মচারির সংখ্যা রয়েছে ৩০ হাজার ৬০৬ জন, সরকারি হাসপাতালে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারির সংখ্যা ৪ হাজার ১৩০ জন, বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারির সংখ্যা ৮ হাজার ১০১ জন, আইন শৃংঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা রয়েছে ৫৪৮ জন, বিজিবি সদস্য ৪১৩ জন, পুলিশ সদস্য ১ হাজার ৮৫৯ জন, আনসার ও ভিডিপির সদস্য ৮ হাজার ৯৯৩ জন, স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মচারীর সংখ্যার মধ্যে জেলা পরিষদ পাচ্ছে ২৯৫, উপজেলা পরিষদ পাচ্ছে ১ হাজার ৯১, ইউনিয়ন পরিষদ পাবে ১ হাজার ২৭৩, শিক্ষাকর্মী মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর সংখ্যা ১৬ হাজার ৭৮৪ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর সংখ্যা ২০ হাজার ৯০০ জন এই টিকা পাবেন। তালিকায় প্রথম পর্যায়ে খুলনায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরাও এই টিকা পাচ্ছেন ৫৪৭ জন।

খুলনা সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ খুলনা বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে এই টিকা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আসার সঙ্গে সঙ্গে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ে দ্রুত টিকা প্রদান করা হবে। এ জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, চাহিদা অনুযায়ী যে সকল ব্যক্তি টিকা পাবেন, আগামী সপ্তাহের ভিতরে তাঁদের নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে গ্রহীতার নামের তালিকা প্রস্তুত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হবে। এর জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য,তিন পর্যায়ে মোট পাঁচটি ধাপে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজারের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে।

যার মধ্যে প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে তিন শতাংশ বা ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জনকে টিকা দেয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে সাত শতাংশ বা এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জনকে টিকা দেয়া হবে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে একটি ধাপে ১১-২০ শতাংশ বা এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ ভ্যাকসিন পাবেন।

তৃতীয় ও সর্বশেষ পর্যায়ে মোট দুটি ধাপে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২১-৪০ শতাংশ বা তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজারের বেশি এবং দ্বিতীয় ধাপে ৪১-৮০ শতাংশ বা ছয় কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে।

টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরুর অন্তত দু’সপ্তাহ আগে অ্যাপটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার পরিকল্পনা করছেন কর্মকর্তারা।

দু’জন টিকাদানকর্মী ও চার জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে মোট ছয় জন করে একেকটি দল তৈরি করা হবে যারা এই টিকাদান কর্মসূচি মাঠপর্যায়ে পরিচালনা করবেন। প্রতিটি দল প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জনকে টিকা দিতে পারবে বলে ধরা হয়েছে।

ছয় জনের দলগুলোতে এক জন নারী ও একজন পুরুষ টিকাদানকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে কমপক্ষে এক জন নারী থাকবেন।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন