প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২২
র্যাবের নিষোজ্ঞা উঠতে সময় লাগবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী র্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা উঠতে ‘সময় লাগবে’ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সরকার এ বিষয়ে কাজ করছে।
বুধবার জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতিতে মন্ত্রী বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনভাবে আমেরিকার সরকার র্যাবের এবং এর কতিপয় সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কোন ধরনের পূর্ব আলোচনা ছাড়াই এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
“প্রসেস কালকেই হবে না। সময় লাগবে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা আমেরিকার সঙ্গে একাধিক মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। ইনশাল্লাহ আমরা যখনই তথ্যগুলো সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌছতে পারব। আমার বিশ্বাস, র্যাবের মত একটি অত্যন্ত ভালো প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিশ্চয় স্যাংশন তুলে নেবেন।”
যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি-জামায়াত ও সরকারের লবিষ্ট নিয়োগের প্রসঙ্গ ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে এই বিবৃতি দেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গত ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র ‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাংলাদেশের র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদসহ বাহিনীর ৭ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে সরকারের অবস্থান জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠিও দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি সরকারকে এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ‘লবিস্ট’ নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে।
‘অপপ্রচারের’ কারণে এই নিষেধাজ্ঞা এসেছে মন্তব্য করে সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “র্যাবের বিরুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন লবিস্ট প্রতিষ্ঠান, আমাদের প্রতিপক্ষের লবিস্ট প্রতিষ্ঠান…। তারা আমেরিকার সরকারের কাছে কেবল মিথ্যা তথ্য কিংবা অসত্য ঘটনাই প্রকাশ করেনি, সেইসাথে পৃথিবীকে বড় বড় যেসব মানবাধিকার সংস্থা আছে, তাদেরকেও প্রতিনিয়ত ফিডব্যাক করতেছে- যে ‘র্যাব খুব খারাপ’ প্রতিষ্ঠান।”
তিনি বলেন, “র্যাব বাই অ্যান্ড লার্জ জনগণের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। তারা দুর্নীতিমুক্ত হয়ে মানুষের সেবা করে। দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশে এরকম একটি ভালো প্রতিষ্ঠান, যেটা দেশের সন্ত্রাস, মাদক বন্ধ করেছে, মানব পাচার মোটামুটিভাবে বন্ধ করেছে… আমেরিকা সরকারের পলিসি হচ্ছে টেরোরিস্ট, হিউম্যান ট্রাফিকিং ও ড্রাগ কমানো। র্যাব এই কাজগুলিই করে।
“অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তারা এই কাজ করে। সেই একটা বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমাদের কিছু লোকজন বিভিন্ন রকমের রং তথ্য দিয়ে এই স্যাংশনটা দিয়েছেন।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায়, “র্যাব এমন বাজে কাজ করেনি যে, তার জন্য তারা পৃথিবীর টেরোরিস্ট অর্গানাইজেশন হিসেবে বিবেচিত হবে, বরং টেরোরিস্টদের বিরুদ্ধে তাদের কাজ। র্যাবের কারণেই হোলি আর্টিজানের পর থেকেই… স্বয়ং আমেরিকার স্টিট ডিপার্টমেন্ট থেকে বলেছে, বাংলাদেশে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে। হোলি আর্টিজানের পরে আর কোনো লোক সন্ত্রাসবাদে মারা যায়নি। বাংলাদেশ এরকম দেশ যেখানে খুব উত্তপ্ত ছিল, সেখানে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে।”
যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পরে বাংলাদেশকে অবহিত করেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “স্যাংশন দেওয়ার পর আমেরিকার সরকার আমাকে জানায়। জানার পরপরই আমি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলাপ করি। আমার আলাপ অত্যন্ত পজিটিভি ছিল। এসব সমস্যা দূরীভূত করার জন্য, যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তা নিরসনের জন্য আমাদের নাম্বারস অব ডায়ালগ আছে। তিনি (মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন সেগুলো তিনি করবেন।”
আগামী মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘পার্টনারশিপ ডায়ালগের’ কাজ শুরু হবে জানিয়ে মোমেন বলেন, “এপ্রিল মাসে সিকিউরিটি ডায়ালগ হবে। তাছাড়া রয়েছে ইকোনমিক পার্টানারশিপ…। আমরা আমেরিকারদের সাথে একাধিক মিটিংয়ের আয়োজন করেছি। ইনশাল্লাহ আমরা যখনই তথ্যগুলো সঠিকভাবে তাদের কাছে পৌছতে পারব, আমার বিশ্বাস, র্যাবের মত একটি অত্যন্ত ভালো প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিশ্চয়ই স্যাংশন তুলে নেবে। বিশ্বাস করি এই নিষেধাজ্ঞা আমরা প্রত্যাহার করাতে পারব।”
শান্তিরক্ষী বাহিনী থেকে র্যাবকে বাদ দিতে জাতিসংঘের কাছে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার চিঠির প্রসঙ্গ ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “সম্প্রতি ১২টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে একটি চিঠি লিখেছেন। বিভিন্ন ধরনের প্রপাগান্ডা ও অনুমান এখানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা বলেছেন- বাংলাদেশের র্যাব বিভিন্ন রকম হিউম্যান রাইটস ভায়োলেট করছে।
“তাদের ভাষায় বাংলাদেশের র্যাব বিভিন্ন রকম অপকর্মে নিযুক্ত আছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এজন্য তারা বাংলাদেশের র্যাবকে পিস কিপিংয়ে না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে। তারা গত নভেম্বরের ৮ তারিখে চিঠি দিয়েছেন। দুই মাস হলো ইউএন এটা পেয়েছে। এ বিষয়ে ইউএনের মুখপাত্র গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘জাতিসংঘ যখনই কাউকে পিসকিপিংয়ে নেয়, তারা নিজের নিয়মে যাচাইবাছাই করে কাজটি দেয়’।”
সরকারের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ চালাতে ওই চিঠি দেওয়া হয়েছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “আমাদের বিশ্বাস এইসব অপপ্রচার এবং দুরভিসন্ধিমূলক কাজ, সেটা বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে। ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে, র্যাব তো একটা ভালো প্রতিষ্ঠান। তাদের ডিমরালাইজ করার জন্য এই অপচেষ্টা যারা করছে, আমি বিশ্বাস করি, তারাই এজন্য দুঃখিত হবেন। এ রকম একটি ভালো প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য যারা যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, এজন্য তারা লজ্জিত হবেন।”
সরকারের ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা’ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রায় ১৮টি কমিটিকে এরকম চিঠি দিয়েছে বলে সংসদে তথ্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “চিঠি দিয়ে তারা দেশের সব রকম সাহায্য বন্ধ করতে বলেছেন। তারা এও বলেছেন, বাংলাদেশের কারণে আমেরিকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তারা রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া নিয়েও অপপ্রচার চালিয়েছে।
“আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্র ও দুরভিসন্ধিতে বিশ্বাস করে না। এজন্য তাদের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য আগে ভাগে এত…। আমরা পাই টাইম টু টাইম। কিন্তু তারা যে দুনিয়ার সবগুলো ইন্টারন্যাশনাল মানবাধিকার সংস্থাকে… এজন্য দুঃখ করতে হয়। এই দেশটা আপনার আমার সবার। এই দেশের মঙ্গল কামনাও সবার। দলের বিরুদ্ধে আপনি অভিযোগ-অনুযোগ করতে পারেন। কিন্তু দেশের বিরুদ্ধে যারা এ ধরনের অপপ্রচার করেন, তাদের প্রতি ধিক্কার। শেইম অন দেম।”