প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২৫
তথ্য প্রতিবেদক : দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে অভিভাবকহীন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজ করছে অচলাবস্থা ও প্রশাসনিক শূন্যতা, যা শিক্ষক-কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝেও হতাশা তৈরি করেছে। নতুন উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা ঘিরে তৈরি হয়েছে তীব্র উদ্বেগ ও বিতর্ক। আবেদনকারীদের তালিকায় সাবেক ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত দুই অধ্যাপকের নাম উঠে আসায় এবং তাদের জোর লবিংয়ের খবরে ক্যাম্পাসে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
গত ১৯ মে ২০২৪ তারিখে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য ক্যাম্পাস ত্যাগ করার পর থেকেই অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম সেরা এই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়টি। এই অচলাবস্থা নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত ৪ জুন ২০২৪ তারিখে নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়, যার আবেদনের সময়সীমা ২৬ জুন শেষ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, উপাচার্য পদের জন্য মোট ১৭ জন আবেদন করেছেন, যার মধ্যে ১২ জনই কুয়েটের বর্তমান শিক্ষক।
উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে যে কজনের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে দুই অধ্যাপককে নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের আমলে সর্বোচ্চ সুবিধা গ্রহণ এবং ক্যাম্পাসে নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ হিসেবে পরিচিতি থাকার অভিযোগ সবচেয়ে জোরালো। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, বিভাগীয় প্রধান এবং হলের প্রভোস্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকাকালীন তিনি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি তৎকালীন ‘ফ্যাসিস্ট’ ছাত্রলীগের এক নেতার মোটরসাইকেলের পেছনে বসে ক্যাম্পাসে মহড়া দিতেন। ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ছাত্রলীগের পদধারী নেতা হিসেবে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং শিক্ষকতার জীবনেও সেই প্রভাব বজায় রেখেছেন। উপাচার্য পদে নিয়োগ পেতে তিনি বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে জোর লবিং চালাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও সুবিধাবাদের অভিযোগ রয়েছে। ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের আমলে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কুয়েটের গুরুত্বপূর্ণ পদেও আসীন ছিলেন। পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হওয়ার জন্য তিনি অত্যন্ত তৎপর ছিলেন। এছাড়া, দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থেকেও আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এমতাবস্থায় কুয়েটের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বড় একটি অংশ উপাচার্য হিসেবে এমন একজনকে চাইছেন, যিনি সৎ, দক্ষ, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। তারা জুলাইয়ের অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কোনো ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’-এর হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব তুলে না দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।
সকল মহলই আশা করছে, সরকার দ্রুততার সাথে একজন যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়ে কুয়েটের প্রশাসনিক শূন্যতা দূর করবে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে।