২৪শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার,রাত ১:০৫

পাঁচ দিনে ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি ॥ পুনরায় শ্রমিকদের পন্য খালাস কার্যক্রম শুরু জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা বৈঠক ॥ বন্দর সচল রাখার নির্দেশ

প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০২১

  • শেয়ার করুন

মোঃ জিয়াউল ইসলাম (জিয়া) ঃ ব্যক্তি স্বার্থ ও দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ভোমরা স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক ঠিকাদার, ভোমরা স্থল বন্দর সকল শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিক সদস্যদের মধ্যে চলছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই । আর এই সুপরিকল্পিত লড়াইয়ের আগুনে ঘি ঢালছে ভোমরা স্থল বন্দর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা পর্ষদ। একটানা পঞ্চম দিন অতিবাহিত হলেও ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাকের মালামাল খালাসে নেওয়া হয়নি কোন সুমিমাংষীত জরুরী পদক্ষেপ। বরং দিনের পর দিন চলছে স্বার্থ সিদ্ধির নাটকীয় আলোচনা বৈঠক। একে অপরের প্রতি চলছে দোষারোপ। বন্দর সংশ্লিষ্ট চোরে চোরে মাসতুতো ভাইদের একচ্ছত্র বিস্তার, নৈরাজ্য সৃষ্টি, অযোগ্যতা, অদক্ষতা স্বচ্ছতার মুখোশে অস্বচ্ছতা প্রভাব ও কৌশলী চাঁদাবাজী পরিচালনার কর্মযজ্ঞ। সাধারন হ্যান্ডলিং শ্রমিকদের শ্রমার্থকে পাথেয় করে চলছে এক ভয়াবহ নাটকীয় কল্পকাহিনী। বন্দর সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাশীন হাইব্রিড নামক বিতর্কিত প্রভাবশালী সিন্ডিকেট কর্তাদের ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অক্টোপাশ গ্রাস করতে যাচ্ছে ভোমরা বন্দরের চলমান সামগ্রীক অবকাঠামো ও রাজস্ব উন্নয়ন। প্রধান মন্ত্রী ঘোষিত ভোমরা স্থল বন্দরটি পুর্নাঙ্গ বন্দরে রুপান্তরিত হওয়ার অন্তরায় সৃষ্টি করছে একটি কুচক্রিমহাল। ভোমরা স্থল বন্দরে বিভিন্ন প্রশাসানিক দপ্তরের অবস্থানরত শীর্ষস্থানীয় কর্তাদের সীমাহীন দূনীতি, অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্যের প্রভাব বিস্তারে ধংষের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়েছে এ বন্দরটি। ভোমরা বন্দর সংশ্লিষ্ট আমদানী-রপ্তানীকারক, হ্যান্ডলিং শ্রমিক সংগঠন, শ্রমিক ঠিকাদার ও স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিবাদমান সমস্যার জালে জড়িয়ে পড়ায় সরকার গত ৫ দিনে ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বন্দর সংশ্লিষ্ট একাধীক ব্যবসায়ী অভিযোগ করে গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে ভোমরা বন্দরকে সুকৌশলে ধরাশায়ী করতে স্থানীয় ও জেলার রাজনীতিক এবং প্রশাসনের মগডালের কর্তাদের নেপথ্য ইঙ্গিত রয়েছে। এদিকে ভোমরা স্থল বন্দর আমদানী-রপ্তানীকারক এ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক মোঃ আবু হাসান জানান, দক্ষিনবঙ্গ সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরটি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এই বন্দর থেকে সরকার প্রতিবছর ১২শ কোটি টাকা রাজস্ব অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে। কিন্তু আজ দক্ষিনবঙ্গের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রান কেন্দ্র ভোমরা বন্দরটি কঠিন সংকটের মধ্যে অবস্থান করছে। যার মূল ধারায় রয়েছে ভোমরা স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ বন্দরে বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষে অনুকুলে ভোমরা স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে হয়রানী ও প্রতারনার শিকার হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে আরো জানান, বর্তমান সরকার দেশের অন্যান্য স্থল বন্দরের ন্যায় ভোমরা স্থল বন্দরটিতেও পন্য খালাসে শ্রমিক সরবরাহের জন্য একজন ঠিকাদার নিয়োগ করে থাকে। সেই নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিক সরবরাহের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ পন্যের পার মেঃটন হিসাবে ৬৯.২০ টাকা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিল গ্রহন করে। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পন্য খালাসের জন্য ব্যবসায়ীদের শ্রমিক সরবরাহ না করে বন্দর কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। উপায়ন্ত না পেয়ে আমদানীকারক ব্যবসায়ীরা বাইরের লেবার সংগ্রহ করে ট্রাক প্রতি ২ হাজার টাকা দিয়ে পন্য খালাস করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে পন্য খালাসের ব্যবসায়ীরা দুই বার লেবার বিল পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে এর প্রতিবাদ করেও কোন প্রতিকার পায়নি তারা। আবু হাসান আরো জানান, গত ৩ মার্চ ২০২১ বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ এক চিঠিতে আমদানীকারক ব্যবসায়ীদের অবগত করেন যে, ১ এপ্রিল ২০২১ থেকে ডাবল লেবার বিল কার্যকর করা হবে। এ উপলক্ষ্যে গত ২৩শে মার্চ ২০২১ বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিবের উপস্থিতিতে ও বন্দর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্ত্বে একটি কার্যকরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিষয়টি মিমাংসা না হওয়া পর্যন্ত ডাবল লেবার বিল কার্যকর না করার জন্য সচিব জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেন। এছাড়া ভোমরা সিএন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার জন্য লিখিত ভাবে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু কোন কিছু তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও ভোমরা স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক তাদের নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে জোরপূর্বক ডাবল বিল চালু করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এ অনৈতিক লেবার বিল চালু হলে প্রতি ট্রাকে শুধু মাত্র লেবার সংক্রান্ত ব্যায় হবে ১০ হাজার ১শত ২০ টাকা। যা বাংলাদেশে আর কোন বন্দরে পরিলক্ষিত হয়না। এটি আবার প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে ডাবল লেবার বিল চালু করে ভোমরা বন্দরকে ধ্বংস করার পায়তারা করা হচ্ছে। এদিকে মঙ্গলবার ০৬ এপ্রিল ২০২১ সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ভোমরা বন্দরে সৃষ্ট পন্য খালাস ও ডাবল লেবার বিল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ আলোচনা সভাটি বেলা ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। এ সভায় ভোমরা বন্দর সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশন, হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নসহ সকল সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেয়। জেলা প্রশাসককে সৃষ্ঠ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা একটি আবেদন জানালে জেলা প্রশাসক বন্দর সচিবের সংগে আলোচনা করে জরুরী সিদ্ধান্ত দেওয়ার আশ্বাস দেন। এছাড়া তিনি বন্দরের সামগ্রীক আমদানী-রপ্তানী কার্যক্রম সচল রাখার জন্য বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের অনুরোধ জানান। এ বিষয়টি নিশ্চিত করে তথ্য দিয়েছেন, ভোমরা কাস্টমস্ সিএন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক ও বন্দর বিষয়ক সম্পাদক দিপংকর ঘোষ। এদিকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা মেনে শ্রমিক সংগঠনের সাধারন শ্রমিকরা পুনরায় পন্য খালাস কার্যক্রম চালু করেছে বলে শ্রমিক নেতারা জানান।

মোঃ জিয়াউল ইসলাম জিয়া
ভোমরা, সাতক্ষীরা
মোবাইল নং- ০১৯১২-৯৯২১৬১

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন