১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার,রাত ১:৪৭

অস্ট্রেলিয়াকে সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জায় ডুবিয়ে বাংলাদেশের জয়

প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২১

  • শেয়ার করুন

এমন লজ্জায় পড়তে হবে সেটা কল্পনায় ছিলনা অস্ট্রেলিয়ানদের। নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসে তারা। সিরিজ হারটা না হয় মানা গেল। কিন্তু শেষ ম্যাচে যা হলো, সেটা কী করে মানবে পরাক্রমশালী দলটি?

নিজেদের ইতিহাসে কখনো এমন লজ্জায় পড়েনি অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টিতে এর আগে তাদের সর্বনিম্ন স্কোর ছিল ৭৯। এবার বাংলাদেশে এসে ৬২ রানে অলআউট হলো ক্যাঙ্গারুরা। সিরিজ তো হেরেছিল আগেই, শেষটায় লজ্জায় লাল হলো ম্যাথু ওয়েডের দল।
মিরপুরে আজ সোমবার (৯ আগস্ট) পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে মাত্র ৬২ রানেই গুটিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। এতে অজিদের সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জায় ডুবিয়ে সিরিজ শেষ করলো বাংলাদেশ। বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে পঞ্চম টি-টোয়েন্টি ৬০ রানে জিতেছে বাংলাদেশ।

এর আগে ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাউদাম্পটনে ৭৯ রানে অল-আউট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, টি-টোয়েন্টিতে এতদিন সেটিই ছিল তাদের সর্বনিম্ন স্কোর। বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে কোনো প্রতিপক্ষেরও এটি সর্বনিম্ন স্কোর।

শুরুতে ব্যাট করে ১২২ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। ১২৩ রান তাড়ায় ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়ার মিছিলে অস্ট্রেলিয়া অলআউট হয়েছে ৬২ রানে। ৬০ রানে ম্যাচ জিতেছে ব্যবধানটা ৪-১ করেছে বাংলাদেশ।

১২৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। আগের ম্যাচে সাকিবকে টানা ৫ ছক্কা হাঁকানো ক্রিস্টিয়ানকে এদিন ওপেনিংয়ে এনেছে সফরকারীরা। কিন্তু ৩ বলে ৩ রান করে নাসুম আহমেদের বলে বোল্ড হন এই অজি ব্যাটসম্যান।

পুরো সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র পারফর্মার মিচেল মার্শ। কিন্তু শেষ ম্যাচে এসে শুরু থেকেই ধুঁকেছে তিনি। ইনিংসের ১৭ রানেই নাসুমের বলে এলবির শিকার হন তিনি। ৯ বলে ৪ রান করেন মার্শ।

অষ্টম ওভারে সাকিবকে বোলিংয়ে আনেন মাহমুদউল্লাহ। উইকেটের জন্য অপেক্ষা করতে হলো মাত্র ২ বল। বল হাতে নিয়েই সাকিব আল হাসান করলেন উইকেট উদযাপন। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডকে বোল্ড করে ফেরান বাঁহাতি স্পিনার। ২২ বলে ২২ রান করেন ওয়েড। পরের ওভারে নিজের হাতেই বল তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ। তার বলে আউট হন ১৭ রান করা বেন ম্যাকডারমট।

নিজের দ্বিতীয় ওভারে অজি শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন সাইফউদ্দিন। ক্যারির পর হ্যানরিকসকে পাঠিয়েছেন সাজঘরে। পরের ওভারেই টার্নারকে ফেরান সাকিব। এরই মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ১০০ উইকেট নেওয়া কৃতিত্ব দেখিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এছাড়া আজই টি–টোয়েন্টিতে প্রথম বোলার হিসেবে ১০০ উইকেট ও ১০০০ রান করার মাইলফলকও স্পর্শ করলেন সাকিব।

এরপর সাইফউদ্দিনের তৃতীয় শিকার হন অ্যাগার। ২ রান করতেই তাকে বোল্ড করেন টাইগার এই অলরাউন্ডার। পরের ওভারে এসেই ফের দুটি উইকেট তুলে নেন সাকিব। ৯ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন সাকিব, ১২ রানে ৩টি নিয়েছেন সাইফউদ্দিন। নাসুম ২ উইকেট নিতে খরচ করেছেন ৮ রান।

মূলত সাকিব-সাইফউদ্দিনের বোলিং তোপেই কুপোকাত হয় অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন ৬২ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৪-১ এ জিতে শেষ করল বাংলাদেশ।

এর আগে শুরুতে ব্যাট করে ব্যাটিং বিপর্যয়ে ১২২ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। পঞ্চম ম্যাচে ওপেনিংয়ে আসেন মেহেদী, নাঈমকে সঙ্গে নিয়ে দুজনের ব্যাটে সিরিজে ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ রান তুলে। এর আগে নাঈম-সৌম্যর জুটি থেকে আসে সর্বোচ্চ ২৪ রান। শেষ ম্যাচে ওপেনিং জুটি থেকে এসেছে ৪২ রান।

শুরু থেকেই অজি স্পিনারদের উপর চড়াও হয়ে খেলেন নাঈম-মেহেদী। আক্রমণাত্মক শুরুর পর ইনিংসের পঞ্চম ওভারে উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওভারের চতুর্থ বলে অ্যাস্টন টার্নারকে মারতে যেয়ে আউট হন মেহেদী হাসান। ১২ বলে ১৩ রান করেন তিনি।

মেহেদীর বিদায়ে সাকিব-নাঈমে দলীয় স্কোর ৫০ পার করে বাংলাদেশ। কিন্তু রানের গতি বাড়াতে গিয়ে আত্নাহুতি দেন নাঈম। নবম ওভারে ড্যান ক্রিস্টিয়ানকে মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেলেন এই ওপেনার। ২৩ বলে ২৩ রান করে আউট হন তিনি। যিনি আগের ৪ ইনিংসে করেছিলেন ৩০, ৯, ১ ও ২৮ রান।

সাকিব আল হাসানের কাছে প্রত্যাশা সবসময় বেশিই থাকে। শেষ টি-টোয়েন্টিতেও ছিল। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের শুরুটাও ভালো হলো। কিন্তু টেনে নিতে পারেননি। সাকিব ফিরেন ২০ বলে ১১ রান করে। অ্যাডাম জাম্পার বলে এলবির শিকার হয়ে আউট হন তিনি।

ক্রিজে আসার পর থেকেই ভালো টাইমিং হচ্ছিল মাহমুদউল্লাহর। কিন্তু আলগা শটে ফিরতে হয় তাকেও। অ্যাশটন অ্যাগারকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ১৪ বলে ১৯ রান করেন তিনি।

মাহমুদউল্লাহর আউটের পর টিকতে পারেননি সৌম্য সরকারও। ওপেনিং থেকে আজ নেমে আসেন চার নম্বরে। তবে সেখানেও সুবিধা করতে পারেননি। ড্যান ক্রিস্টিয়ানের বলে টার্নারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে করেন ১৮ বলে ১৬ রান।

রানের গতি বাড়াতে যেয়ে আউট হন নুরুল হাসান সোহান। ১৩ বলে ৮ রান করে এলিসের ডেলিভারিতে ফেরেন তিনি। শেষ ওভারে জোড়া উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ১১ বলে ১০ রান করে স্কুপ করতে গিয়ে ফাইন লেগে ধরা পড়েন আফিফ। আর দ্রুত রান নিতে গিয়ে কোনো বল মুখোমুখি হওয়ার আগেই আউট সাইফইদ্দিন।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন নাথান এলিস ও ড্যান ক্রিস্টিয়ান। একটি করে উইকেট নিয়েছেন টার্নার, অ্যাগার ও জাম্পা।

নিজেদের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ না করতে পারলেও অস্ট্রেলিয়ার মত দলের বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ শেষ করতে পারাটা বাংলাদেশের জন্য স্মরনীয় হয়ে থাকবে।

ভাল লাগলে শেয়ার করুন
  • শেয়ার করুন